অসামান্য ঘোরার অভিজ্ঞতা মায়ামি, কী-ওয়েস্ট ও সানসেট-পয়েন্ট এ
শেষ ডায়েরি এর কথা মতো আমরা আমাদের ঘুরতে যাওয়ার শেষ পর্যার যাত্রা শুরু করে দিলাম মায়ামি এর উদ্দেশ্যে Sea-World (অর্ল্যান্ডো) থেকে ! আমাদের GPS এর সময় অনুযায়ী কমপক্ষে ৫-ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে !

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে, Sea-World এ আসার ঠিক আগে আমরা সব মালপত্র নিয়ে হোটেল এর চেক-আউট করে নিয়েছিলাম ! যাতে, Sea-World এ সব কিছু দেখে নিয়ে আমরা সরাসরি মিয়ামি এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারি ! সেই কথা মতো আমরা সব কিছু দেখে সন্ধে সাড়ে ৭-টা নাগাদ ওখান থেকে দুটো গাড়িতে রওয়ানা দিলাম ! সমুদ্রে যেমন একটার পর আরেকটা ঢেউ আসে, এই ঘোরাটা আমার কাছে ঠিক সেরকম ছিল ! একটা করে অসামান্য অভিজ্ঞতা শেষ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই আরেকটা এগিয়ে আসছে ! আর বেড়াতে গেলে যদি মনের মতো সঙ্গী পাওয়া যায়, তার থেকে ভালো কি বা আর হতে পারে ? প্রায়, ২ ঘন্টা ধরে চলার পর গাড়িতে সবাই খুব ই খিদে পেয়েছে বলে বুঝতে পারলাম ! দেবু গাড়ি চালাতে-চালাতে আমায় বললো যে মোবাইল এ আমি খোঁজ নিয়ে যেন দেখি, কোনো ভালো দেশি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে কিনা আমাদের যাওয়ার পথে ! সেই মতো, আমি তিনখানা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এর নাম পেলাম যা আমাদের তখনকার অবস্থান থেকে প্রায় ২৫-মাইল দূরে ! কিন্তু, আমাদের কে অন্য গাড়ির লোকদেরকেও জানাতে হবে ! সেই মতো, আমি সৌরভ কে ফোন করলাম ! ও তখন গাড়ি চালাচ্ছিল না, সেকথা আমি জানতাম ! ওকে আমাদের খাবার এর প্ল্যান এর কথা বললাম ! ও ফোন টা ধরে ওই গাড়িতে সবাইকে বললো ! আমি শুনতে পারলাম ওখানেও সবাই এক কথায় রাজিও হয়ে গেলো ! তিয়াসা এর ই মধ্যে আরো কয়েকটা রেস্টুরেন্ট দেখে নিয়ে আমাকে বললো যে তার মধ্যে একটার ফিডব্যাক খুব ভালো আছে ! আমি তিয়াসাকে ওই রেস্টুরেন্ট এর ঠিকানাটা আমায় টেক্সট করে পাঠিয়ে দিতে বললাম ! আর সেই সঙ্গে যেতে-যেতে আমরা হোটেল এ ফোন করে আমাদের দশ জনের জন্য একটা বড়ো টেবিল বুক করে নিলাম ও আমাদের স্টার্ট অর্ডার টা দিয়ে দিলাম ! যাতে, পৌঁছে আমাদের খুব বেশি অপেক্ষা না করতে হয় !

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাত ১০-টায় আমরা পৌছালাম ! সবাই তখন যতটাই ক্লান্ত, ততটাই পেটের মধ্যে সিংহের গর্জন ও ইঁদুর এর দৌড় কে উপলব্ধি করছে ! গিয়ে দেখলাম হোটেল টা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে ! আমরা গিয়ে বসতেই আমাদের জন্য গরম-গরম সুস্বাদু খাবার চলে এলো ! এতো দূরে বাড়ির থেকে আছি, অথচ এতো ভালো খাবার খেতে থাকার সময় কারোর মুখে কোনো কথাই বেরোলো না ! যেন, খুব গুরুগম্ভীর ধ্যান এ সবাই মগ্ন ! শেষ পাতে মিষ্টি আর চাটনি দেখে সবাই খুশিতে গদ-গদ অবস্থা ! করেছে কি ! শেষে ওই হোটেল এর মালিক এসে বললেন, “আমি জানি আপনারা অনেক দূর থেকে আসছেন ! আমরা বন্ধ করে দিলে আপনারা খাবার পাবেন কিনা কে জানে ! তাই, আমার দেশের মানুষ আমাদের এখান থেকে বিনা খাবারে চলে যাবে, সেটা হতে পারেনা !” শুধু, তাই নয়, উনি আমাদের কে খাবারের বিল এ খানিকটা ছাড় ও দিলেন !

এইরকম, খাবার ও তারপর মালিকের ব্যাবহারে আমরা সবাই অভিভূত হয়ে গেছিলাম ! অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা আবার ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম ! প্রায়, রাত সাড়ে বারোটায় আমরা মায়ামি-তে ঢুকলাম ! ঠিক হলো, আগে সৌরভ আর তিয়াশা কে ওদের হোটেল এ নামিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের হোটেল এ তে ঢুকবো ! সেই কথা মতো, ওদের নামিয়ে দিয়ে আমরা হোটেল এ চেক-ইন করলাম ! আমরা বাকি লোকেদের জন্য তিনটে সুইট বুক করেছিলাম ! শুনেছিলাম, এর রুম থেকে ভিউ নাকি ভীষণ সুন্দর ! ঘরে ঢুকে বুঝলাম কেন সেকথা সবাই বলছে ! একটা বিশাল কাঁচের স্লাইডিং দরজা ! হালকা করে হাতলে চাপ দিতেই নিজে থেকে দরজাটা খুলে গেলো !

সামনে, একটা বরো ব্যালকনি ! সেখান থেকে মহাসমুদ্রের ঢেউ এর আওয়াজ কানে ভেসে আসলো ! মনের মধ্যে আবার বিদ্যুৎ খেলে গেলো ! দৌড়ে ব্যাগ থেকে ট্রাইপড ও ডিজিটাল ক্যামেরা টা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে থাকলাম ! কোথা থেকে এতো শক্তি চলে এলো ? নিজেও জানিনা ! আর উল্টোদিক থেকে আসা হালকা ফুরফুরে বসন্তের মতো হাওয়া – মনটাকে দুলিয়ে দিলো ! হঠাৎ, চট করে ইন্দ্রকে ডাকবো বলে দৌড়ে রুম এ ঢুকতে গিয়ে দড়াম করে কাঁচের দরজায় সজোরে ধাক্কা ! ঘরের AC এর ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছিলো বলে কেও একজন দরজা টা বন্ধ করে আমায় বলেছিলো ! আমি তখন ঘোরের মধ্যে থাকায় সেকথা শুনতে পাইনি ! এই আওয়াজ এর পর মনে হলো মাথাটা হালকা হয়ে প্রায় চোখে সর্ষে ফুল দেখার মতো অবস্থা ! যদিও খুব সাবধানে ক্যামেরাটা আগলে রেখেছি ! পড়লেও, যাতে ক্যামেরা আমার কোলেই পরে ! সবাই, একসাথে ধরে আমায় বিছানায় শুইয়ে দিলো ! নাকটা ফাটিয়ে বসলাম ! গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসলো ! ভাগ্গিস, আমরা সবাই অনেক মেডিসিন আর ব্যান্ডেড নিয়ে গেছিলাম ! সঙ্গে-সঙ্গে খেয়ে নিলাম ! আর, এটাই ঠিক করলাম, পরের দিন যদি খুব ব্যাথা বাড়ে তো ডক্টর এর কাছে ছুটতে হবে ! তার, যদিও দরকার পড়েনি ! কিন্তু, পরের দিন সকালে উঠে মনে হচ্ছিলো যেন প্রচুর পরিমানে নেশা করলে মাথা যেমন ভারী হয়ে থাকে, প্রায় সেইরকম অবস্থা ! তার সঙ্গে অল্প নাকে ব্যাথা ! যদিও ওষুধটা খুব কাজে দিয়েছিলো ! দুটো দিন খেতেই একদম সেরে যায় !

তবে, আমার সব ব্যাথা নিমেষেই কমে গেলো, যখন সকালে খোলা অবস্থায় ঘর থেকে ব্যালকনি এর এক ঝলক দৃশ্যটা দেখলাম !

ঘর থেকে বসে আটলান্টিক মহাসাগর এর এইরকম রূপ দেখার কথা তো ভাবাই যায়না ! সকালের সূর্যের আলোয় তার আভা জলের মধ্যে রুপালি রঙের চিকিমিক যেন আলাদা একটা মাত্রা জুড়ে দিয়েছে !

আরেকটু পরেই বুঝলাম – ঝকঝকে রোদের সঙ্গে আদ্রতাপূর্ণ গরমকে নিয়ে আমাদের এই জাইগাটাকে উপভোগ করতে হবে ! এই প্রথম দিনের বেলায় ব্যালকনি তে এসে দাঁড়ালাম ! আর, আমাদের হোটেল এর ভীষণ সুন্দর লবি টা কে দেখলাম !

এইরকম, মহাসমুদ্রের চেহারা দেখলে কি আর কেও ঠিক থাকতে পারে ! সবাই ফুটতে শুরু করেছে যে কখন জলে ঝাঁপাবে ! তাই, সকাল ৯-টার মধ্যে জলখাবার সেরে নিলাম ! এর মধ্যে সৌরভ ও তিয়াশা ওদের জলখাবার সেরে হেঠে আমাদের হোটেল এ চলে এসেছে ! এরপর, সবাই মিলে মালপত্র নিয়ে বেরোনো হলো ! মায়ামি হলো ভীষণ আদ্রতাপূর্ণ জায়গা ! আর এখানে অল্প কিছু কাজ করলেই ভীষণ ঘাম হয় ! তাই, এইরকম জায়গায় হাতের সামনে ঠান্ডা পানিও রাখা খুব ই দরকার ! তাই, আমরা কোকাকোলা এর দুটো ক্রেট আর গ্যাটোরেড এর একটা ক্রেট কিনে নিয়ে এসেছি ! এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, গ্যাটোরেড হলো আমাদের অতি পরিচিত Glucon-D এর মতো ! যদিও স্বাদে তার থেকে অনেকটাই ভালো খেতে !

বালির মধ্যে দিয়ে হাঠতে-হাঠতে দেখলাম অনেকে সমুদ্রের পারে বালির ওপর রঙিন বড়ো ছাতা লাগিয়ে, ছায়ার তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন ! আবার, কেও সূর্যের তাপে নিজেকে সেঁকছেন কানে হেডফোন লাগিয়ে ! যাতে, শরীর এর রং টা একটু বাদামি হয় ! আরো কিছু দূরে দেখলাম, কয়েকজন লোক ফুটবল এর সাহায্যে পা দিয়ে ভলিবল খেলছে ! খেলাটা বেশ মজার !

হঠাৎ ই, পিছনে তাকিয়ে দেখি আমাদের হোটেল এর আরো এক সুন্দর রূপ ! কিছুক্ষন, আগে ওপর থেকে এই জায়গাটায় দেখেছি ! এখন, উল্টো দিকের দৃশ্যটাও মন কাড়ে ততটাই !

এরপর, আমাদের মিত্রশক্তি প্রায় চার ঘন্টা জলের মধ্যে দাপাদাপি করে বেরাল ! আমি কিছু সেই বিশেষ মুহূর্ত আমার ক্যামেরায় ধরে রাখলাম !

আমিও একটা ভাড়া করা রঙিন ছাতার নিচে বসে থেকে চারিদিক উপভোগ করছি ও সময় বুঝে সেগুলোকে আমার ক্যামেরা তে বেঁধে রাখছি ! আর, কিছু সময় অন্তর-অন্তর আমার মিত্রশক্তি এসে কোনো একটা ঠান্ডা পানিও খেয়ে আবার দৌড় লাগাচ্ছে !

আমি দেখছিলাম যে কিছুক্ষন অন্তর কোন এক পর্যটক স্পীডবোট এ টানা প্যারাশুট করে ওপরে উঠে চলেছে ! দেখে হঠাৎ ই সেই মজার মুহূর্ত টা মনে পড়ে গেলো “জিন্দেগী না মিলেগি দুবারা” সিনেমাটির দৃশ্য থেকে ! যেখানে, ফারহান আখতার এর চরিত্রটি প্লেন থেকে প্যারাশুট করে লাফ দেওয়ার আগের সেই মজাদার ভয়ের মুহূর্ত টা !

আমার মনে হয়, প্রথমবার নিশ্চই রোমাঞ্চের সঙ্গে ভয়টাও হয়তো থাকবে কারো কারোর ক্ষেত্রে !

হঠাৎ ই দূরে দেখলাম একটা অপেক্ষাকৃত ছোট বোট কিছু পর্যটক কে নিয়ে অতলান্তিক মহাসাগর এর গভীরে এগিয়ে চলেছে !

এর বেশ খানিক্ষন পর সবাই ক্লান্ত হয়ে আমার কাছে এসে বসলো ! তারপর একটু বিশ্রাম করে সবাই হোটেল এ ফিরে স্নান করে নিলাম ! ডিনার ঠিক রাত ৯ টার মধ্যে সেরে নিলাম ! কারণ, পরের দিন এই হোটেল ছেড়ে আমরা Key-West এর দিকে রওয়ানা দেব !

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমরা খুব সকালে উঠে তৈরী হয়ে, হোটেল জলখাবার খেয়ে আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের জন্য সকাল ৮ টার মধ্যে রওয়ানা হলাম !

যেটা আমরা ঠিক করলাম, এই যাওয়ার সময়ে রাস্তার ধারে কোনো ধাবায় বসে আমরা দুপুরের খাবারটা খেয়ে নেবো ! এই রাস্তাটা অদ্ভুত সুন্দর ! একটা এক রাস্তার সরু ব্রিজ যেটা শেষ হতেই লাগলো প্রায় ঘন্টা দুয়েক !

এই ব্রিজটি পুরো মহাসাগরের ওপরে করা ! আর, মাঝে-মাঝে ছোট-ছোট দ্বীপ এর সঙ্গে জোড়া ! যেখানে, পেট্রল পাম্প আর কিছু খাবারের দোকান যেমন – ম্যাক-ডি, বার্গর কিং আর আই-হপ দেখা যাচ্ছিলো !

শেষ পর্যন্ত, সবাই মিলে ফোনে আই-হপ কেই বেছে নিলো ! আই-হপ এ খেয়ে নিয়ে আমরা আবার এগিয়ে চললাম ! স্থানীয় সময়ে সকাল ১১ টায় আমরা Key-West এ পৌছালাম !

এই জায়গাটা দেখলে ঠিক মনে হবে যেন ছোটবেলায় দেখা কার্টুন নেটওয়ার্ক এর কোনো সিনেমা থেকে জীবন্ত হয়ে এসেছে !
এমনকি গাড়ি গুলো পর্যন্ত তার সাক্ষ রাখে !

এইবার অবশ্য, আমরা আমাদের সব ব্যাগ গাড়িতে রেখে তত্থ কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে চললাম ! এর মধ্যে চোখে পড়লো, দেশ-বিদেশ এর বহু পর্যটক কিছু বাহারি বাস এ করে গোটা জায়গার ঘোরার পরিকল্পনা করে, সেখান থেকে টিকেট কাটতে লাগলেন !

আমাদের সবাই যখন প্রথমে স্থির করছিলো কোন কোন জায়গা আগে সবাই ঘুরবে, তখন ই আমি আরেকটু হেঠে এগিয়ে যেতেই আরেকরকমের বাস দেখলাম ! যেটা, ফটোবন্দি না করে পারলাম না !

কয়েকজন ঠিক করলো যে তারা প্যারাসেলিং করবে ! ইন্দ্রনীল অবশ্য ঠিক করলো জেট-স্কি করবে ! তো সেই মতো আমি ইন্দ্রনীলের সঙ্গেই গেলাম ! ফোটোগ্রাফি সাবজেক্ট হিসাবে আমার মনে হলো এটা অনেক বেশি আকর্ষণ দায়ক হবে হয়তো ! যেখানে ট্রেইনার ছিলেন, সেখানটা অনেকটাই ফাঁকা অন্য জায়গার তুলনায় !

প্রথমে, ইন্দ্রনীল-কে ওর ট্রেইনার এর থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, যাতে কিভাবে ও এই স্কি-কে জলের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ! এছাড়া, আরো অনেক আপদকালীন প্রশিক্ষণ উনি দিতে থাকলেন ! আমি পারে আরেকটু এগিয়ে যেতে দেখলাম, একদল লোক, তাদের স্পীডবোট নিয়ে তীব্র গতিতে জলের ওপর দিয়ে ছুটে চললো !

একটা ছোট্ট নৌকা এর মধ্যে আমার চোখে পড়লো ! দেখতে যদিও খুব সুন্দর, কিন্তু, তার কানাগুলো প্রায় জল ছুঁই-ছুঁই করছে ! সমুদ্রের একটু কাছে গেলে যে কি হবে ! আর, তার থেকেও বড়ো হলো, যারা চড়বে তখন তাদের মনের মধ্যে যে ঠিক কি চলবে, তা মা-গঙ্গাই জানে !

হঠাৎ ই যেন মনে হলো, কোনো চেনা পরিচিত মুখ মহাসমুদ্রের পারে তার জেট-স্কি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ! টেলিফোটো লেন্স টা চোখে দিতেই বুঝতে পারলাম যে ও ইন্দ্র !  মনে-মনে তারিফ না করে পারলাম না ওর সাহস কে !
সবাই ফিরে এলে ঠিক করা হলো যে আমরা ঘন্টা দুয়েক এর এক ক্রজ সফর করবো ! যেমন ভাবা, তেমন কাজ ! টিকেট ও কেটে ফেলা হলো ! এই সফরের বিশেষত্ত হলো, একটি অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু সুন্দর জাহাজ এ করে অতলান্তিক সাগর এ পারি দিয়ে কিউবা এর খুব কাছ থেকে ঘুরে শেষে সমুদ্রেই সানসেট-পয়েন্ট এ গিয়ে সূর্যাস্ত দেখা !

টিকেট কেটে ফিরে আসার সময় লক্ষ্য করলাম যে একজন মানুষ নিজের আনন্দে একটি কারাওকে বাদ্যযন্ত্রের সাথে ড্রাম বাজিয়ে চলেছেন ! এবং, তার সুন্দর তাল, লয় ও সবশেষে ওনার আনন্দ দেখে পর্যটকরাও ভীষণ আনন্দ পাচ্ছেন ! 

খুব কম সময়ে দেখা যায়, কাজটাকে কেও এত্ত মজাদার করতে পারে !

এইবার পরিকল্পনা মতো, আমরা দেড়টা নাগাদ সবাই জড়ো হয়ে জাহাজে উঠলাম !
একটু-একটু করে পোর্ট টা দূরে সরে যেতে থাকলো !
একটা সময়ে চারিদিকে অসাধারণ সবুজ জল ! ভাবতেই পারছিনা যে অতলান্তিক মহাসাগর এ এখন আমরা একা !
এর ই মধ্যে লক্ষ্য করলাম, মাথার ওপর একটা Sea-Plane উড়ে গেলো ! এই বীমান গুলোর বিশেষত্ব হলো যে, এরা জলেও নামতে পারে !

প্রায়, আরো আধ ঘন্টা যাওয়ার পর জাহাজটা সমুদ্রের বুকে থামলো ! ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলেন জাহাজের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আস্তে ! সেই মতো আমরা সবাই, সেই বড়ো হল ঘরটিতে জড়ো হলাম ! এরপর দেখলাম, সেই হলের নিচ থেকে একটা স্লাইডিং দরজা খুলে গেলো ! আর, তার নিচটা একটা ভীষণ ই মোটা ম্যাগ্নিফায়িং কাঁচ দিয়ে লাগানো ! ক্যাপ্টেন বললেন যে, এই কাঁচের পাটাতনটা নাকি এতই শক্ত যে, হাতুড়ি দিয়ে মেরেও নাকি ভাঙা যায়না ! যেটা সব থেকে মজার ব্যাপার হলো, ওই জায়গার গভীরতা আর ওই কাঁচের দূরের জিনিস কে কাছে দেখানোর ক্ষমতা – এই দুই মিলে অতলান্তিক মহাসাগরের মাটি ও তার চারপাশের নানানরকম গাছ, বিভিন্ন অচেনা ও রং-বেরং এর মাছ ও দেখতে পেলাম ! এই অভিজ্ঞতাও যেন আমার সঙ্গে সারাজীবন থাকবে !

এই শোএর শেষে আমাদের জন্য মার্কিন খাবার এর বন্দোবস্ত করা হলো ! সঙ্গে, নিচের তলায় কাউন্টার থেকে নিজের পছন্দের অগুনতি পানিও খেতে লোক ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল !

খাওয়া-দাওয়া সারা হয়ে গেলে, একটি স্থানীয় ব্যান্ড, তাদের নানান লোকগীতি পরিবেশন করলেন গিটার বাজিয়ে ! সব মিলিয়ে যেন ছুটির মজাটা কয়েকশো গুন্ বাড়িয়ে দিলো ! এর সঙ্গে-সঙ্গে জাহাজ আমাদের শেষ গন্তব্যের দিকে ছুটতে শুরু করলো ! আমরা দেখলাম অনেক ছোট বোট সেই Sunset-Point থেকে ফিরে আসছে ! কারণ, সন্ধের দিকে ঢেউ বেড়ে গেলে বিপদ এদের জন্য !

আস্তে-আস্তে লক্ষ্য করলাম সূর্য ঢোলে পড়তে লাগলো মহাসমুদ্রের কোলে ! আর তার উজ্জ্বল হলুদ ও কমলায় মেশানো আভা যেন আমাদের এই ঘোরার শেষ হওয়াকেই ইঙ্গিত করছিলো !

আমরা ছাড়াও, আরো কয়েকটা বড়ো বোট ওখানে ঘুরছিলো ! সূর্যাস্তের ঠিক আগে সবকটা জাহাজ ও বড়ো বোট গুলো তাদের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলো !

তাই, চারিদিকে এখন শুধু মহাসমুদ্রের গর্জন আর সেই অপূর্ব সূর্যাস্তের অনুভূতি ! হয়তো, এইরকম অভিজ্ঞতা আমি ছোটবেলায় গল্পের বইতে পড়েছিলাম ! কিন্তু, চাক্ষুস দেখতে পারবো – তা স্বপ্নেও ভাবিনি ! ধীরে-ধীরে চোখের সামনে সূর্যটা দূরে থাকা একটা মেঘের মধ্যে লুকিয়ে পড়লো, ও তার ও কিছুক্ষন পর সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করলো !

এইবার, আমাদের পারে ফেরার পালা ! ঠিক যখন পারের কাছে চলে এসেছি ! তখন চাঁদের আলোয় আরো এক মহাসমুদ্রের অপূর্ব রূপ দেখলাম ! এতো আমাদের প্রত্যাশাই ছিল না !

অবশেষে, পাড়ে নেমে তারপর সবাই কিছু খেয়ে হোটেল এর দিকে রওয়ানা দিলাম ! বিদায় সুরের সেই করুন ঘন্টা বেজে উঠলো ! হোটেল এ গিয়ে সবাই স্নান করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হবে ! কারণ, তার পরের দিনেই যে যার নিজের মতো ফ্লাইট ধরে ফিরে যাবে সেই রোজকার কর্মব্যস্ততার দিনে ! আর, অপেক্ষা করে থাকতে হবে আরো এক এইরকম কোনো ঘোরার অভিজ্ঞতার জন্য !

এই হলো সেই অনবদ্য সদস্য যাদের সঙ্গে ঘোরাটা যেন আরো বেশি আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছিলো আমার সেই সফরকে !

এই পাঁচ দিনের আমার ঘোরার অভিজ্ঞতা যে শুধু আমায় আনন্দই দেয়নি, অনেক কিছু শিখিয়েছে ! বিভিন্ন সময়ে যে চূড়ান্ত রোমাঞ্চ হয়েছে, তা হয়তো এতো সহজে তুলে ধরাটা খুব ই কঠিন ! জীবনের প্রথম Nasa এর যাওয়া থেকে, ছোটদের প্রিয় Sea-World এ, আবার, অসাধারণ সুন্দর মায়ামি থেকে অপূর্ব Key-West, ও সব শেষে Sunset-Point এর এই অসামান্য সূর্যাস্ত এক কথায় বিশুদ্ধ বাংলায় বলে – “অনির্বচনীয়” !

আপনারা জানাবেন, কেমন লাগলো আমার এই অভিজ্ঞতা !

আমি আবার আসবো, আরো এক নতুন ঘোরার অভিজ্ঞতার ঝাঁপি নিয়ে ! ততদিন, আপনারা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন !

Subscribe বোতাম এ ক্লিক করুন আপনার ইমেইল দিয়ে, ও আরো অনেক ছবির সাথে ঘুরতে যাওয়ার গল্প পড়ুন !