
প্রথম পর্ব : |
দিন-টা আমার আজ ও বেশ মনে পরে ! সপ্তলহরীর প্রথম দিন স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ! আমরা সব বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছি ক্যাম্পাস এ ! আমি অবশ্য স্টুডেন্ট হিসাবে যায়নি ! আমার বন্ধুর নিমন্ত্রনে সেখানে গেছি – নতুন একটা ইনোভেটিভ টেকনোলজি এর ওপরে ওখানে একটা সেমিনার এ আমার তৈরী কিছু তত্থকে সকলের সাথে শেয়ার করতে ! আমার বন্ধু – সায়ক ! যদিও, বয়সে আমার থেকে অনেকটাই ছোট ! এখন, অবশ্য আমরা বন্ধুই বটে ! দেখলাম , এক দৃষ্টিতে ও যেন তাকিয়ে আছে দূরে কোনো এক দিকে !
মজা করেই জিজ্ঞাসা করলাম , “কি ব্যাপার বলতো ? কাকে দেখছিস ? “ ও বললো “দেখছিস ওকে ?” ঠিক না বুঝে বললাম – “ভাই কার কথা বলছিস ? কিছুই তো বুঝতে পারছি না ! “ সায়ক বললো – “দেখ দূরে ভিড়ের মধ্যেই একজন যেন একা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ! ওই হলো সপ্তলহরী ! ওর দাদা আমাদের সিনিয়র ! মেয়েটা কলকাতায় যাদবপুর থেকে পড়া শেষ করে – এখানে পিএইচডি করতে এসেছে ! ভীষণ শান্ত বাইরে ! কিন্তু ভেতরে যেন কোথায় একটা ছোট্ট অথচ দুস্টুমি ভরা মানসিকতা লুকিয়ে আছে !” কথা শুনেই রিচার্ড বলে উঠলো – ” Dude, সামথিং ইস নট রাইট ! “ সবাই আমরা চেপে ধরলাম – ” কেস টা কি ভাই ? একটু শুনি তো ! “ এতক্ষনে , সায়ক যেন নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেই সঙ্গে-সঙ্গে সামলে নিয়ে বললো – ” ওই দেখো, এখানে কেসের আবার কি আছে ! ওর দাদা আমাকে বলেছিলো যে ওর ভর্তির সময়ে যাবতীয় দরকারি খবর যেন দিয়ে ওকে হেল্প করি ! তাই, দুবার ওর দাদার মোবাইল থেকেই ফোন করে ওকে কিছু ইনফরমেশন দি ! এছাড়া , তেমন কিছু আমার বলার নেই !” আবার , সবাই চাপলো ! “গুরু, এসব বললে হবে ! তুমি দুদিন বেটা ওর দাদার ফোন থেকে কাজের কথা বলে তার চরিত্র চর্চা সেরে ফেললে ? ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি ! মাইরি , ওই কথায় আমরা মেনে নেবো বুঝি ! আসল , কথা টা একটু ঝেড়ে কাশতো ? একটু , পান্ডোরা বাক্সটা ওপেন করোতো গুরু ! সঠিক তত্থ গুলো একটু বিশ্লেষণ করি ! “ আমি বললাম – ” আরে ভাই , লজ্জা কিসের ? বলেই ফেলনা ! সবাই তো বন্ধু বা বন্ধুর মতোই ! অসুবিধার কি আছে ? “ অনেক চাপাচাপির পরেও যখন কিছু বার করা গেলোনা , এমন সময় জেনি এসে হাঠে হাড়িটা দিলো ভেঙে ! ও বললো – “এই সায়ক তোমার বান্ধবী ওখানে দাঁড়িয়ে না ? তুমি তো প্রথম দিন ওকে নিয়ে ক্যাম্পাস এ ঘুরে-ঘুরে সব দেখাচ্ছিলে – যদি না আমি খুব ভুল বলে থাকি ? “ এই কথা যেন আগুনের মধ্যে ঘি দেওয়ার কাজ করলো ! ও সঙ্গে-সঙ্গে বললো – ” আরে না ! ওর দাদা আমাকে জোর করে পাঠালো ! বললো তোর ফাইনাল পেপার-এ হেল্প চাইলে আমার বোনকে শুরুর দিকে একটু হেল্প করে দে ! তাইতো ! নাহলে , আমি চিনি নাকি ? “ রিচার্ড বললো – ” তা এই কথাটা আগে কেন বলা হয়নি ? “ সায়ক বললো – ” আরে সেরকম কিছু হলে তো বলবো ! জাস্ট দেখা হলো ! ওকে নিয়ে গেলাম ক্লাস-এ ! তারপর , আমি চলে এলাম ! ব্যাস ! এইটুকুই ! আর তো কিছু নেই ! “ আমি বললাম – ” তা বেশ ! তা মেইন গেট থেকে ওর বিল্ডিং এ যেতে লাগে ওই পনোরো মিনিট ! তার মধ্যে থেকে চরিত্রের এইরকম সালোকসংশ্লেষ তো অবিস্মাস্য ! তোর তো ডাটা সায়েন্টিস্ট হয়ে প্রেডিকশন করা উচিত মডেল-এ ! তুই তো ভুল সাবজেক্ট নিয়েছিস বলে মনে হচ্ছে ! কি বলিস ভাই ? “ সায়ক নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে খানিকটা লজ্জায় মুখ লাল করে হন-হন করে উল্টো দিকে সবে হাঠা দিতে শুরু করেছে , এমন সময়ে পেছন থেকে একটা মিষ্টি অথচ চাপা গলায় ওর নাম ধরে কেও ডাকছে ! সায়ক এর সঙ্গে-সঙ্গে আমরা সবাই ঘুরে তাকালাম ! দেখলাম সেই সপ্তলহরী ! “নামটা শুনলে যেন কোনো এক সুন্দর সঙ্গীত এর কথা মনে পরে ! তাই না ?” – প্রশ্নটা করলো জিনি ! কিছুদিন আগে ও ইউনিভার্সিটি অফ বার্কলেতে ইন্ডিয়ান ইনস্ট্রুমেন্ট আর ক্লাসিকাল সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছে ! আমি বললাম – ” আরিব্বাস ! ঠিক তো ! একদম ঠিক বলেছো !” সপ্তলহরী কাছে এসে আমাদের সামনে দাঁড়াতে সায়ক কেও এদিকেই আস্তে হলো ! খুব সম্ভবত , মেয়েটি ওকে আমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করতে দেখায় , সবার সাথে আলাপ করবে বলে এগিয়ে এসেছিলো ! সায়ক কে এসে বললো – ” কিগো ? তুমি কোথায় ছিলে ? হন্নে হয়ে তোমায় খুজছিলাম ! তুমি তো মনে হয় আমায় ভুলেই গেছো ? “ এই কথা শুনে অনেকটা গলা খাকড়িয়ে পরিষ্কার গলায় বলতে গিয়ে যেন সায়ক আরো শব্দ জড়িয়ে বললো – ” না ! বন্ধুরা মুভি যাবে ! আমি আসলে পড়বো ! তাই আর কি ! বলতে এসেছিলাম ক্যাম্পাস থেকে ! এবারে , হোস্টেল এ যাবো !” সপ্তলহরী বললো – ” তা তুমি তোমার বন্ধুদের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দাও ! “ সায়ক যেন পড়ি কি মরি করে কোনোরকমে বললো – ” এই আমার বন্ধুরা ! আর , ও হলো সপ্ত ! “ আমি লক্ষ্য করলাম রিচার্ড আর জিনি মুচকি হাসছে ! আর , এইরকম অদ্ভুত আলাপ এর জন্য আমরা সবাই হেসে একে-একে নিজেদের পরিচয় সপ্তলহরী কে মানে সায়ক এর “সপ্ত” কে দিলাম ! খুব অদ্ভুত হলেও সায়ক এর এনালাইসিস টা নেহাত ই খারাপ নয় ! মেয়েটা সত্যি একটু বাচ্চা , আবার তার সাথে দুস্টু-মিষ্টি একটা স্বভাব ও লক্ষ্য করছি ! অথচ , কথায় বেশ মার্জিত একটা ব্যাপার আছে বৈকি ! এরপরে , “সপ্ত” বলে উঠলো – ” চলো তোমাদের বিল্ডিং টা দেখে আসি ! শুনেছি , তোমাদের বিল্ডিং টা নাকি খুব মডার্ন সব ইকুইপমেন্ট আছে ! “ হাত থেকে ঝপ করে সায়কের জলের বোতলটা পরে গেলো ঘাবড়ে গিয়ে ! অনেকটা খিন গলায় ঢোক গিলে বললো – ” চলো ! দেখাই !” |
দ্বিতীয় পর্ব : |
এর ঠিক দিন সাতেক পরে হঠাৎ একদিন আমার মোবাইল এ একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন !
আমি ফোনটা নিয়ে বললাম – ” হাই ! দিস ইস সাত্যকি ! “ অন্য দিক দিয়ে গলাটা এলো – ” আমি সপ্তলহরী বলছি ! সায়ক এর বন্ধু ! মনে পড়েছে ? “ আমি বললাম – ” আরে হাঁ মনে পড়েছে ! বলো সপ্ত কি খবর? “ বলেই ভাবলাম এইরে, “সপ্ত” নামটা তো সায়কের দেওয়া ! অমনি উল্টো দিক থেকে প্রশ্ন এলো – “আচ্ছা ! আমায় সবাই সপ্ত বলছে কেন বলতো? যাকেই , ফোন করছি – সেই আমায় এই নামে ডাকছে !” আমি মুচকি হেসে বললাম – “আরে না-না, সেরকম কিছু না ! আগের দিন সায়ক তোমায় ওই নামেই ডেকেছিল ! তুমিও হয়তো খেয়াল করোনি ! তাই, সবাই হয়তো মনের অজান্তেই মাথায় ওই নামটাই গেথে নিয়েছে ! আর কিছু নয় ! যাই হোক, বলো তুমি ! কি খবর ? কেমন আছো ? আর হাঁ, কি জন্য ফোন করেছো শুনি ?” যদিও আমার পরের কোনো প্রশ্নের জবাব না পেয়ে উল্টো দিক দিয়ে অন্য একটা কথা শোনা গেলো – ” ও ! সায়ক বলেছে ? তাহলে ঠিক আছে ! “ ও আরো বললো – ” তুমি তো সায়ক এর থেকে অনেক বড়ো ! আর, তাছাড়া এটা দেখেছি – সায়ক তোমায় খুব রেস্পেক্ট ও করে ! তাহলে তোমায় সাত্যকি দা বলি? “ আমি বললাম – “নিশ্চই ! দেখো, সায়ক এর সঙ্গে আমার আলাপ একটা সেমিনার এ, যেখানে আমি আমার কোম্পানি এর থেকে গেছিলাম ! আর, ও ওর ইউনিভার্সিটি থেকে ! তাই, প্রফেশনাল ওয়ার্ল্ড এ নো দাদা, ভাই, দিদি বা বোন চলে ! তাই, ও আমায় সাত্যকি বলেই ডাকে ! কিন্তু, তুমি আমায় সাত্যকিদা বা দাদা বলতে পারো ! আমার আপত্তি নেই ! কি বলো ?” শুনে এক গাল হেঁসে বললো – ” বেশ ! দাদা ! আমায় কিছু সাজেশন দিতে পারবে ! খুব একটা অদ্ভুত ফীল করছি ! আগে কখনো এরকম করিনি ! “ আমি বললাম – “বলো ! শুনি তো আগে ! “ ও বললো – ” বেশ ! আচ্ছা দাদা, ধরো – তোমার কাউকে মনে হয় বেশ ভালো – না মানে ধরো খুব ভালো বা ভীষণ ভালো লাগে !” আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম – “মানে, তুই বলতে চাইছিস তোর ক্রাশ ! ঠিক তো ?” শুনেই সপ্ত বললো – ” হাঁ ! ঠিক ! একদম ঠিক ধরেছো ! সেই ক্ষেত্রে, আমি দেখছি মানে জানতে পারলাম যে ছেলেটার ও সেরকম কেও নেই ! একটু আত্মভোলা ! মানে নিতান্ত ভালো আর কি ! হয়তো, একটু লোনলি ! কিন্তু, নিজেই বুঝতে পারেনা !” আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম – ” আসলে সে কতটা লোনলি সেটা তুই তাকে বোঝাতে চাস , আর তাই তার প্রতি সহানুভূতি দিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে চাস ! কি ? তাইতো ?” সপ্ত বললো – “একদম ঠিক ! কি করে বুঝলে ?” আমি বললাম – “সেটা বড়ো নয় ! তারপর বল ! শুনি তোর প্রচন্ড অসুখটা, যার জন্য তোর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ! তা, আমি ধরে নিতেই পারি, সে কোনো প্রবাসী বাঙালি, এখানে থাকে ! কি – তাইতো ? “ সপ্ত বললো – ” একদম ঠিক ! কিন্তু, আমি চাই সে একবার মুখ ফুটে বলুক ! কারণ, আমি বললে সে যদি না করে দেয় ! ভয়ে, কষ্টে ঘুম আসছে না ! ছটফট করছি ! কি করবো ! একটু গাইড করে দাও দাদা ? আমি জানি মানুষ টা ভালো ! একা আছে ! কেও দেখার নেই ! “ এই বলে ওপারে আর কোনো শব্দ নেই ! আমি বললাম – ” হুম ! গম্ভীর সমস্যা রে ! তুই যার কথা বলছিস, সেও যে মনে হয় তোকে পছন্দ করে ! তাই, তুই কাছে এলেই এক্সিডেন্ট করে বসে !” বলার সঙ্গে-সঙ্গে সপ্ত বললো – ” আমি তো তোমায় নাম বলিনি ! না আমি তাকে আমার মনের কথা বলেছি ! তুমি কার কথা বলছো ? “ আমি বললাম – ” যদি আমার ইন্দ্রিয়গুলো খুব খারাপ না হয়ে থাকে তো, মনে হয় তার তোকে দেখলেই এই জলের বোতল পরে যায় ! তোতলাতে থাকে, গলা শুকিয়ে যায় – এইসব আর কি ! তা, আমি কি তোর তাকে ঠিক চিনতে পেরেছি ?” ঐদিক দিয়ে ভেসে এলো – ” এমা ! তুমি ধরে ফেলেছো ! “ বলেই লজ্জার একটা হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম ! আমি বললাম – ” হুম ! বুঝলাম ! কিন্তু, এইসব মানুষকে সঙ্গে নিতে গেলে আগে একটু বুঝতে দে তাকেও ! তারপর, কিছু একটা করতে হবে – যাতে সে মুখ ফুটে সেই গোল্ডেন শব্দ গুলো তোকে বলে ! অবশ্য, না বললেও ক্ষতি নেই ! তার মনটা আগে বুঝতে হবে ! আর, তাছাড়া এটা একবিংশ শতাব্দী ! এখানে, মেয়েরাও বলতে পারে তার মনের অবস্থা বুঝে ! একটা জিনিস শুনে রাখ ! না বলে কিছু হারিয়ে যাওয়ার থেকে বলে হারানো টা অনেক ভালো ! এটলিস্ট, তুই পরে কখনো আফসোস করবি না ! কি বলিস? “ শুনে ওই দিক থেকে ভেসে এলো – ” ভাগ্যিস তোমায় ফোন করেছিলাম সায়ক এর থেকে ফোন নম্বরটা নিয়ে ! এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছে ! কিন্তু, তুমি কিছু একটা ম্যাজিক করো প্লিজ ! “ আমি বললাম – ” হবে ! হবে ! ধৈর্য ধরো ম্যাডাম ! এইসব জিনিস এ অনেক ধৈর্য দরকার ! যাইহোক, শোন আমি এখন বেরোবো, তোকে আবার পরে ফোন করছি ! তুই ভালো থাকিস ! কেমন? আর, এইসব নিয়ে বেশি চিন্তা করিস না ! সব ঠিক হয়ে যাবে ! এখন পড়াশোনাটাই মন দে ! “ সপ্ত বললো – ” ঠিক আছে দাদা ! এখন থেকে আমি মাঝে-মাঝেই ফোন করবো ! চলো ! টাটা ! “ |
তৃতীয় পর্ব : |
এর বেশ কিছুদিন পরে, আমার একটা কাজ পালো-আল্টো তে ছিল, যেই জায়গাকে সারা বিশ্ব “সিলিকন ভ্যালি” বলেও চেনে ! এই জায়গার বিশেষত্ব হলো, এটা স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটি এর খুব কাছে ! আর, সমস্ত স্টার্ট-আপ কোম্পানির আঁতুরঘর ও বলা চলে !
আমার নতুন প্রজেক্ট এর কাজ শুরু হয়েছে সবে ! লাঞ্চটাইম এ ওখানে সমস্ত কলিগরা মিলে খেতে বেড়িয়েছি ! সবাই মিলে ঠিক করা হলো কাছেই একটা ভালো ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে ! ওখানে গিয়ে আমাকে ওয়েলকাম পার্টি দেবে ! সত্যি কথা বলতে কি – খাবার দাবারে আমার কখনোই কোনো আপত্তি নেই ! ভালো দেশি খাবার যেখানেই পাওয়া যায়, আমি সেখানেই যেতে রাজি আছি ! ঠিক দুপুর একটায় আমরা রেস্টুরেন্ট-এ পৌছালাম ! বেশ ভিড় ! বোঝাই যাচ্ছে – এই জায়গাটি স্থানীয়দের মধ্যে যথেষ্ট পরিচিত ! প্রায়, আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে ভেতরে ঢুকতে পারলাম ! বেয়ারা আমাদেরকে আমাদের টেবিল দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ! সবে আমি সিট-টায় বসেছি , হঠাৎ চোখটা গেলো কোনের একটা ছোট্ট সিটটাতে ! খুব পরিষ্কার করে দেখতে পারছিনা অনেক লোকজনের মাথা থাকায় ! কিন্তু, মনে হচ্ছে দুজনকেই চেনা ! তারপর, হঠাৎ চেয়ারের পেছনে বসে থাকা ছেলেটি বেয়ারাকে ডেকে কথা বলতে গিয়েই দেখি, সায়ক ! ওকে দেখেই, মাথায় একটা দুস্টুমি বুদ্ধি চলে এলো ! আমি, আমার কলিগদের বলে, উঠে ওর সিটের কাছে গিয়ে – যেই না ডেকেছি – “সায়ক, এখানে কি করছিস ?” বাস ! পুরো কেলেঙ্কারি কান্ড ! জল খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে সে এক জাতা অবস্থা ! আর, উল্টোদিকে আমায় তাক করিয়ে দিয়ে বসে আছে – সায়ক এর “সপ্ত” ! ও, ঝট করে উঠে মাথার ওপরে আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর বিষম টা কমানোর চেষ্টা করলো ! আর, আমার চোখে চোখ পড়তেই মুচকি হেসে ওর দিকেই দেখতে থাকলো ! এর মধ্যেই, রেসরুরেন্ট এর বেয়াড়ারাও ছুটে চলে এসেছে ! এক কথায় – ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরো লাট করলো ! তারপর, একটু ঠিক হতে বেয়ারা কেক নিয়ে হাজির ! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ” কেক কে চেয়েছে ? “ বেয়ারা বললো – ” আজ্ঞে স্যার চেয়েছেন, ম্যাডাম এর আজ জন্মদিন ! তাই, সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি সেলেব্রেট করবেন বলে ! “ আমি অবাক হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে “সপ্ত”-ও অবাক হয়ে গেছে ! ও জিজ্ঞাসা করলো – “তুমি জানলে কি করে আজ আমার বার্থডে? “ সায়ক প্রায় খাবি খাওয়ার মতো অবস্থায় বললো – ” না, মানে কলেজ এর এডমিশন এর দিনে তোমায় ডেটটা লিখতে দেখেছিলাম ! তাই, ভাবলাম – একা আছো ! বাড়ি থেকে এতো দূরে ! তাই আর কি !” আমি মুচকি হেসে বললাম – ” খুব ভালো, লেটস উইশ হার এ গ্রেট বার্থডে এন্ড ওয়ান্ডারফুল লাইফ ইন কামিং ডেস ! “ আর, এটা বুঝলাম – সপ্ত যেন আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রায় অন্য জগতে চলে গেছে ! যদিও, মুখে খুব বেশি প্রকাশ না করলেও, কথার মধ্যে হাসি আর এক্সসাইটমেন্ট চেপে রাখতে পারছেনা ! এরপর, আমি বললাম – ” যাক ! খুব ভালো সারপ্রাইজ গেলো আজকের দিনটা ! বহুদিন মনে থাকবে !” সপ্ত বলে উঠলো – ” থ্যাংক ইউ সাত্যকি দা ! কিন্তু, তুমি এখানে হঠাৎ ? “ আমি বললাম – ” আমার নতুন প্রজেক্ট এখানে রে ! তাই, এখন থেকে মাঝে-মাঝেই এখানে আসবো ! এই আর কি ! তবে, চিন্তা নেই ! তোদের জ্বালাবো না ! “ এই কথা শুনে – সপ্ত এবারে লজ্জা পেয়ে গেলো ! আর, সায়ক আমতা-আমতা করে বলে উঠলো – ” খুব ভালো ! এবারে, তাহলে মাঝে-মাঝেই আড্ডা মারা যাবে ! কি বলো ?” আমি বললাম – ” আর ইউ সিউর ? না, মানে শুধু-শুধু এসে তোদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্যে আমার থাকাটা কি ঠিক হবে ? ইউনিভার্সিটি এর কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, আমি তো এতসব তো আবার জানিনা ! তাই বলছি ! “ সপ্ত এবারে বললো – ” না দাদা ! তুমি আসলে আমার বেশ ভালোই হয় অনেক কিছুতেই ! আর, তাছাড়া তোমার থেকে অনেক কিছু শেখার ও তো ওর আছে ! আমাদের খুব ভালো লাগবে ! “ এই বলে আমি ওদের ওখান থেকে আমার টেবিল এ চলে এলাম ! আর, মুচকি হেসে মনে-মনে ভাবলাম – ” আজকের সারপ্রাইজ পার্টিটা আমাদের সকলের জন্যই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো ! “ |
চতুর্থ পর্ব : |
এর ঠিক কিছুদিন পর, আমি লস-গ্যাটোস এ এক বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন এটেন্ড করতে গেছি ! আমার বন্ধু রত্নদীপ আবার স্ট্যান্ডফোর্ড থেকে পিএইচডি করছে ! ওর সাথে আমার আলাপ হয় 2016 এর দূর্গা পুজোতে ! ছেলেটা খুব ই মিশুকে ! আর, ওর বৌয়ের আতিথেয়তার কোনো তুলনাই হয়না ! তার সাথে ওরা দুজনেই অসম্ভব ভালো রাঁধুনি, যা আবার আমার সব থেকে দুর্বল জায়গা ! দেশের বাইরে যদি খোদ বাঙালির অতি প্রিয় সব মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়, তাহলে আমার অন্তত 100 মাইল পারি দিতেও আপত্তি নেই ! ওদের ছোট ছেলের মুখে ভাত !
সবে গিয়ে পৌঁছেছি ! খাবারের ভোঁ-ভোঁ গন্ধে যেন পেটের ভেতরে সব পাচনতন্ত্র আরো অনেক সক্রিয় হয়ে উঠেছে ! রত্নদীপ সবে কয়েকটা চিকেন তন্দুর এর লেগ পিস দিয়ে গেছে ! হঠাৎ, দেখি দূরে সায়ক এর সাথে সপ্ত ঢুকছে ! সায়ক আমাকে দেখে বললো – “আরে তুমি এখানে ?” আমি বললাম – “সেটা তো আমারও প্রশ্ন, তোরা এখানে কি করছিস ?” এইবারে, সপ্ত বললো – “সাত্যকি দা, অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা হলো ! আজ আমার আশাটাও অনেকটা বেড়ে গেলো !” আমি বললাম – “মানে ? ঠিক বুঝলাম না ! একটু ঝেড়ে কাস তো !” সপ্ত একটু মুচকি হেসে বললো – ” না, তুমি এলেই দেখেছি আমার কোনো একদিকে গতিবেগ টা বেশ বেড়ে যায়, নাহলে সেই এক ই জায়গায় আটকে থাকে ! আশা করি আজ ও সেরকম কিছু অপ্রত্যাশিত একটা হবে !” আমি হেসে বললাম – ” ও বাবা ! আমি যে কারোর লাকি চার্ম হতে পারি, সেটা এতদিন জানা ছিলোনা ! তবে, মন থেকে আমিও চাই – আজ তোর আরেকটু গতিবেগটা বাড়ুক !” সায়ক যেন আমাদের কথা বার্তার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলো না ! ও বললো – ” গতিবেগ, আটকে – এসবের মানে কি? “ আমি বললাম – ” ও কিছু না, আমি আর সপ্ত একটা সোশ্যাল রিসার্চ স্পেকুলেট করছি ! আমরা, তার কথাই বলছি ! ওসব নিয়ে তুই আর ভাবিস না ! “ এর মধ্যে হঠাৎ করে দেখি, ঘরে একটা ছেলের প্রবেশ ! ছেলেটার মুখের মধ্যে বেশ একটা বুদ্ধিমান অথচ বেশ খোলামেলা গোছের হাবভাব আছে ! রত্নদীপ ওকে আমাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো ! ওর নাম – সঞ্জয় ! সঞ্জয় ও কলকাতা থেকে সবে এসে স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে মলিকুলার বায়োলজিতে রিসার্চ করবে ! ও থাকে নর্থ কলকাতা তে ! ওর বাবা হলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট এর সদ্য অবসরপ্রাপ্ত লেকচারার ! ছেলেটি পড়াশোনায় তো ভালোই, তার সঙ্গে খুব সহজেই সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে ! ঢুকেই, সপ্ত এর সাথে আলাপ করে বললো – “তোমাকে আমি কিন্তু সপ্ত বলবো, কারণ তুমি তো আমার ই বয়সী ! আর, তাছাড়া কাজের জায়গায় আমরা সবাই কলিগ ! কি বলো সাত্যকি দা ?” আমি বললাম – ” নিশ্চই ! ” বলেই মুচকি হেসে মনে-মনে ভাবলাম – “এতো তাড়াতাড়ি যে আমার এফেক্ট এইভাবে হবে, সেতো আমি নিজেই ভাবিনি ! এইবারে মনে হয় সপ্ত এর ডেডলক টা কাটবে !” আর, তার সঙ্গে সঞ্জয় এও বললো – ” তুমি আর সায়ক দা তো অনেক সিনিয়র, তোমাদের থেকে নানা বিষয়ে – মানে পড়াশোনা ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে টিপস নেবো ! কি বলো ? “ আমি জিজ্ঞাসা করলাম – ” তার মধ্যে কি প্রেম ও পড়তে পারে ? বলে দে ভাই আগেভাগে ! “ সঞ্জয় বললো – “আপত্তি কি ? তোমরা তো আছোই আমায় গাইড করে দেবে !” এই কথা শুনে সায়ক প্রায় উত্তেজিত হয়ে বললো – “এটা পড়ার জায়গা ! পড়তে এসেছো ! পড়ো ! বাবা-মা এতো টাকা দিয়ে তোমায় পড়তে পাঠিয়েছে, তাদের কথা খেয়াল রেখে তাতে মনোযোগ দাও ! যত্তসব ! “ বলেই – সপ্তকে বললো – ” সপ্ত, চলো ! তোমার দাদা বলেছেন তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেতে ! “ সপ্ত বললো – ” এমা ! দাদা তো গতকাল বলেছিলো ! আজ তো দাদা আসবে ! তাই , আমরা এক সাথেই যাবো !” সায়ক বললো – ” ও ! “ সঞ্জয় বললো – ” দেখো সায়ক, আমি খুব ফ্রাঙ্ক ! আর, যা মনে আসে আমি চেপে রাখিনা ! সঙ্গে-সঙ্গে বলেদি ! তাতে, ভবিষ্যতে আমি কখনো আফসোস করবোনা এই ভেবে যে আমি বলতে পারতাম, কিন্তু বলিনি বলে হয় নি !” আমি হেসে বললাম – ” তার একটা নমুনা দে, নাহলে বুঝবো কি ভাবে ?” সঞ্জয় বললো – ” বেশ ! এই যেমন ধরো – সপ্ত এর হাসি টা খুব মিষ্টি ! মানে, এরকম হাসি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় !” কথাটা শুনে – সপ্ত হেসে ফেললো আর লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে গেছে ! আরেকজনের ও মুখ লাল হয়েছে – তবে সেটা মনে হয় বিপরীত অর্থে ! সায়ক বললো – ” জানোতো সাত্যকি-দা, কিছু এঁচোড়ে পাকা ছেলেপুলের জন্য বাঙালি ছেলেরা এতো বাইরে ভোগে ! সব মেয়েরা ভাবে – বাঙালি ছেলে মানেই ফ্লার্টবাজ ! “ আমি বললাম – “এই দারা-দারা, কি বল্লি তুই ? সাত্যকি দা? তুই তো এতদিন তো আমায় সাত্যকি বলতিস ! মানছি, তুই আমার থেকে ছোট ! কিন্তু , আজ হঠাৎ সাত্যকি থেকে সাত্যকি-দা ! ব্যাপারটা কি ?” সায়ক বললো – ” না, দেখো – ভেবে দেখলাম ! বড়োদের কে তাদের যোগ্য সম্মান দেওয়া উচিত ! আর, ব্যাচ এর সিনিয়র দের কেও ! এক ব্যাচ এর মধ্যে আমার কোনো আপত্তি নেই ইয়ার্কি মারায়, কিন্তু সেটা সিনিয়রদের সাথে হলে আমি কি বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে পারি ! তার, একটা সংগ্রামী প্রতিবাদ জানানো উচিত ! “ শুনে আমি হেসে বললাম – ” ওরে তুই তো দেখছি সঞ্জয় এর ইয়ার্কি-কে শ্রেণী-সংগ্রাম এর সাথে তুলনা করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাইছিস ! তুই, আমায় সাত্যকি দা বললে আমার আপত্তি নেই ! কিন্তু, হঠাৎ করে তোর হলোটা কি ?” সঞ্জয় বললো – ” সাত্যকি-দা, আমি কি ভুল কিছু বলেছি ? মানে – সপ্তর হাসিটা সুন্দর না ? তুমি কি বলো ?” শুনে যেন সায়ক এর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করেছে ! ঝপ করে সামনে রত্নদীপ এর হাত থেকে আধ খাওয়া বিয়ার এর বোতল টা নিয়ে ঢক-ঢক করে খেয়ে নিয়ে বললো – ” সাত্যকি-দা, আমি এবারে থেকে তোমায় দাদা বলেই ডাকবো ! আর, দাদা হয়ে, পুরোনো রিলেসন এর ভিত্তিতে তুমি আমায় সব কিছুতে একটু হেল্প করে দিও ! আমি ঠিক গুছিয়ে পারিনা !” আমি বললাম – ” সেতো নিশ্চই ! কিন্তু, কি পারিস না ?” সায়ক বললো – ” এইসব, অনেক চাটুরে ছেলের মতো ভালো কথা বলতে ! তাই, সব কিছু হারিয়ে যায় ! চললাম ! আমি ! পরে, প্রেমের কোর্স এ তোমার ভালুয়েবল সাজেশন চাই – রায় & মার্টিন বিচিত্র পত্রিকার মতো !” আমি বুঝলাম – ছেলের উত্তেজনার বসে বিয়ার খাওয়ার এফেক্ট টা শুরু হয়ে গেছে ! এই বলে সায়ক হন-হন করে হাঁঠা লাগাতেই – সপ্ত পেছন থেকে ডেকে উঠলো – “সায়ক, আমি এসেছিলাম তোমার সাথে, দাদা আসলেও ঠিক করেছিলাম তোমার সাথেই যাবো ! তা তুমি আমায় একা ফেলে চলে যাবে ?” সঞ্জয় এর ই মধ্যে বলে উঠলো – “আরে চিন্তা কেন করছো ? আমরা বাকিরা সবাই আছি তো ! পৌঁছে দেব ! “ এই কথা দুটো শুনেই সায়ক বলে উঠলো – ” ঠিক আছে – সপ্ত ! শুধু তুমি জোর করলে বলে থেকে গেলাম ! এখন, তোমায় নিয়েই ফিরবো ! আফ্টারল, আমার একটা দায়িত্ব তো আছে যখন নিয়ে এসেছি !” সপ্তর মুখে এবারে এক গাল হাসি আর তার সঙ্গে যেন একটু আগে বলার গতিবেগের যে বৃদ্ধি হয়েছে, তার পরিতৃপ্তি ওর চোখে-মুখে ভেসে উঠলো ! আমি ইশারা করে দিতেই, রত্নদীপ খাবার পরিবেশনের নাম করে সঞ্জয়কে নিয়ে চলে গেলো ! এতক্ষনে, যেন মনে হলো – সায়ক-এর বুকে একটু বল এলো ! আর, যেন এখন একটু ওকে নিশ্চিন্ত লাগলো !” আর, আমিও মুচকি হেসে ওদেরকে বলে খাবার খেতে চলে এলাম ! মনে-মনে ভাবলাম – “বেশ এগোচ্ছে ! ভালোয়-ভালোয় সমাপ্তি টা হলে মনটা কিন্তু সত্যি খুব খুশি হবে !” |
পঞ্চম (শেষ) পর্ব : |
এর বেশ কিছুদিন পরে আমাদের এখানে লং-উইকেন্ড থাকায়, আমি একটু ঘোরার প্ল্যান করছি ! বাড়িতে একা থাকলে তো বেশ বোর লাগে ! আর, নতুন একটা টেলি-লেন্স কিনেছি ! তা দিয়ে ভাবছি সান-ফ্রান্সিস্কো শহরের কিছু স্ট্রিট-ফোটোগ্রাফি করবো ! কারণ, সেক্ষেত্রে বেশ দূর থেকে মনের মতো ফ্রেমটা পাওয়া যায় !
পিয়ার-39 এর চারপাশে বেশ কিছু ছবি তুললাম স্ট্রিট পারফরমারদের ! এই শহরেও অনেক হোমলেস আছে ! দূর থেকে তাদের বেশ কিছু ছবি তুলে দুপুরের দিকে বেশ খিদে লাগলো ! পিয়ার-39 এর সামনেই আছে হার্ড-রক কাফে ! সুতরাং, আর কোনো কিছু না ভেবে ঢুকে গেলাম ! বেয়ারাকে রিকোয়েস্ট করে পিয়ারের দিক করে একটা ভালো সিট জোগাড় করে ফিশ-এন্ড-চিপস, ক্র্যাব ফ্রাই আর একটা বিয়ার অর্ডার দিয়ে বসে আছি ! সান-ফ্রান্সিস্কোতে সারা বছর ই আবহাওয়া ভালো থাকে ! তার ওপর, আজ যেন আরও ভালো ! ষোলো ডিগ্রী, সঙ্গে হালকা ফুরফুরে হাওয়া আর ঝলমলে রোদ নীল আকাশে ! পুরো যেন এক টুকরো কলকাতার শরৎ কালের পুজোর আকাশ নিয়ে চলে এসেছে ! কিছুক্ষনের মধ্যে বেয়ারা খাবার দিয়ে গেলো ! সবে ফিশ-এন্ড-চিপস এ একটা কামড় বসিয়েছি, দূরে একতলায় চোখটা গিয়ে আটকে গেলো ! দেখি – সপ্ত আর সঞ্জয় ! সঙ্গে, আরেকজন ছেলে ! যদিও, তাকে আমি আগে কখনো দেখিনি ! ভাবতে শুরু করলাম – “তাহলে সব ঘটনার পরিণতি এক হয়না !” এর কিছুক্ষন পরে আমি মন দিয়ে খাচ্ছি ! বিয়ারটা অর্ধেকটা শেষ করেছি ! এর মধ্যে শুনতে পারছি সেই চেনা ডাক – “দাদা ! তুমি এখানে ?” তাকিয়ে দেখি – সপ্ত ওদের দুজনকে নিয়ে হার্ড-রক ক্যাফেতে ঢুকেছে ! আমি হেসে বললাম – “ছুটির দিন ! কিছুতো একটা প্রোডাকটিভ করতে হবে ! তাই, ক্যামেরা নিয়ে শহরকে নজরবন্দি করতে বেরিয়ে গেলাম ! তা তোরা এখানে কি করছিস ? না ! মানে এখানে সবাই আসতে পারে ! কিন্তু, এইখানে কি দেখতে এসেছিস ?” সপ্ত বললো – “এই দাদা আর সঞ্জয়দা বললো যে sfo টা ঘুরে আসি ! বাড়িতেই বসে ছিলাম একা ! তাই ভাবলাম যাই, ঘুরেই আসি ! তা তোমার তো আমার দাদার সাথে নিশ্চই আলাপ নেই ?” আমি বললাম – “না রে ! আলাপ করিয়ে দে !” সপ্ত ওর দাদাকে ডাকলো আর বললো – “দাদা ও হচ্ছে সাত্যকি-দা ! আমি ওকে দাদা বলেই অবশ্য ডাকি ! সায়কের সূত্রে আলাপ ! কিন্তু, কদিনের আলাপেই ভীষণ কাছের হয়ে গেছেন ! তোমার থেকে যেমন পড়াশোনার গাইডেন্স নিয়ে থাকি, ওনার থেকে পার্সোনাল গাইডেন্স !” শুনে সপ্তকের দাদা এক গাল হেসে বললো – “তাহলে তো আপনি আমার ও দাদা ! খুব ভালো হলো – আরো একজন বড়ো কাউকে পাওয়া গেলো যিনি আমাদের গাইড করতে পারবেন !” সঞ্জয় বলে উঠলো – “সাত্যকি-দা শুধু যে তোমাদের দাদা-ই নন ! আমার ও ! এর মধ্যে প্রজেক্ট দরকারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন আমি ওর থেকে পেয়েছি !” আমি বললাম – “হয়েছে-হয়েছে ! তোরা এবারে থাম ! নাহলে ওপরে গ্যাস বেলুন হয়ে উঠে যাবো ! পেটে বিয়ার আছে – ঠিক মতো কন্ট্রোল করতে পারবো না ! শেষে নামতে গিয়ে না একটা কেলেঙ্কারি করে বসি !” শুনে সবাই “হা-হা” করে হেসে উঠলো ! বেয়ারাকে রিকোয়েস্ট করে আরো তিনটে চেয়ার আমার টেবিল এর সাথে জুড়ে দিতে বললাম ! “ঠিক বুঝতে পারছি না – প্রশ্নটা করা ঠিক হবে কিনা ! তাও জিজ্ঞাসা করি – আরেকজনের কি খবর ?” – আমি জিজ্ঞাসা করলাম ! সপ্ত বললো একটু মৃদু হেসে – খানিকটা অনুযোগ ও দুঃখের সুরে – “সব সাদা পাথরেই তাজ মহল হয়না দাদা ! কিন্তু, তাজ মহলে আবার সাদা পাথর লাগে ! আমি সাদা পাথর দেখে এগিয়ে গেছিলাম, ভেবেছিলাম যদি সাদা পাথর দিয়ে আরেকটা নিজের মতো তাজ-মহল করতে পারি ! সাদা পাথর পেলাম বটে ! কিন্তু, ঠিক করে বুঝতে পারলাম না কি করে জোড়া লাগিয়ে বানাবো ! বলতে পারো একটু বুঝতে দেরি হয়ে গেলো ! আর, যখন বুঝলাম – তখন সেই পাথর আর আমার নেই !” ও আরো বললো – “আমার এই সময়ে সঞ্জয় সত্যিকারের বন্ধুর মতো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ! প্রথমটায়, আমার ও একটু প্রশ্ন ছিল ! কিন্তু, যখন শুনলাম ওর বান্ধবী দশ বছর আগে কলকাতা ছেড়ে কর্মসূত্রে এখানে চলে এসেছে ! আজ তার সঙ্গে বহুদিন পরে আবার দেখা করবে – আমি এক কথায় হাঁ বলে দিলাম ওর মনের জোর দিতে ! তাই, আজ দাদাকে নিয়ে এসেছি ! যদিও ওর সাথে আমার কিছুই মেলেনা, কিন্তু এই একটা জায়গায় আমি ওকে খুব রেস্পেক্ট করি – ও খুব ট্রান্সপারেন্ট আর বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে জানে !” আমি বুঝলাম – আর বেশি কথা না বাড়িয়ে একথা বললাম – “পৃথিবীতে তো সাতটা আশ্চর্য আছে ! তাই না ? একটা না পেলেও আরও বাকিগুলো না দেখার বাধ্য-বাধকতা তো নেই ! তাহলে খুঁজতে আপত্তি কোথায় ?” শুনে সপ্ত বলে উঠলো – “থ্যাংক ইউ, দাদা ! আমি জানতাম তোমার সঙ্গে কথা বললে তুমি নিশ্চই কিছু একটা গাইড করবেই !” আমি বললাম – “তাহলে বলিসনি কেন ?” সপ্ত বললো – “আসলে মনে-মনে হয়তো এখনো একটা অজানা আশা ছিল ! তাই, তোমায় বলে সেটা মন চাইছিলো না শেষ করে দিতে, যেখানে তোমার উপস্থিতিতে অনেক কিছু মজাদার ঘটনা ঘটেছিলো !” আমি বললাম – “বুঝলাম ! যাই হোক, আর ভাবিস না ! এগিয়ে চল ! তোর সামনে এখন অনেক কিছু পরে ! সেগুলো করতেই তো এখানে এসেছিস ! তাই না ? তাই এবারে আগে বারো !” ওর দাদা আর সঞ্জয় এক সাথে বলে উঠলো – “একদম ঠিক বলেছো ! এটাই তো ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম !” আমি বললাম – “স্মৃতিতে তোর ভালো সময়গুলো রেখে দে ! ওটা ভুলিস না ! কিন্তু, দুঃখটাকে পাশে যত্নে তুলে রেখে এগিয়ে যা !” আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে সপ্তকের চোখ ছল-ছল করছিলো ! কিন্তু, আমি এও জানি যে ওরা দুজনেই পারবে ! কি হয়েছিল আমি আজ ও জানিনা বা পরে জানতেও চাইনি ! কিন্তু, যেটা ভালো লেগেছিলো – দুজনে খুব সম্মানের সঙ্গে দুই দিকে চলে গেছিলো ! এটাই বা কজন পারে ! তাই, আমার শ্রদ্ধা ওদের দুজনের জন্যই তোলা রইলো ! |
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ : সমস্ত ছবি আমার নিজের তোলা – এই ছবির সাথে গল্পের চরিত্রের কোনো মিল নেই ! নেহাৎ প্রচ্ছদের কারণে প্রতীকী হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ! |
বিশেষ ঘোষণা : |
আমার গল্প কেমন লাগলো তা এখানে একটা ছোট্ট-কমেন্টস দিয়ে জানালে খুব ভালো লাগবে !আশা করি আপনারা সবাই ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন ! @কপিরাইট – সাত্যকি দে |
Subscribe বোতাম এ ক্লিক করুন আপনার ইমেইল দিয়ে, ও আরো অনেক ছবির সাথে ঘুরতে যাওয়ার গল্প পড়ুন ! |
Comments
Shristi Sengupta
admin