Yellowstone এর শেষ দিন এ জলপ্রপাত দেখে নিয়ে আমি আর ইন্দ্রনীল দা, দুজনেই একটু ক্লান্ত ! ঠিক হলো, ওখানে যে Visitor Center আছে, সেখানে আগে একটু দুপুরের খাওয়া সেরে নিয়ে পরের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ঃ শুরু করা হবে !
সেই কথা মতো, আমরা দুজনে গেলাম ! এই তত্থ কেন্দ্র টা বেশ বড়ো ! আর, এদের দেশের একটা বড়ো চমক হলো, এই ধরণের জায়গায় খাবার এর দোকান ছাড়াও অনেক গিফট শপ থাকে, যেখানে সেই জায়গার অনেক জিনিস পত্র পাওয়া যায় ! তার থেকেও এদের অনেক ডলার আমদানি হয় ! যা এদের সেই অঞ্চলের অর্থনীতি কে মজবুত করতে সাহায্য করে ! তার সঙ্গে যুক্ত হয় – অনেক কর্মসংস্থান ও ! এই জায়গাটা দেখতে অনেকটাই প্যাগোডা এর মতো !

যথারীতি, আমি একটা বিগ চীজ Burger আর ক্রিস্পি আলু ভাজা নিয়ে নিলাম ! গরম যাতে না লাগে, আর গলাটাও যাতে একটু ভেজে – একটা পেপসি এর ক্যান নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ! ইন্দ্রনীল দা, পিজ্জা এর এক টুকরো মুখে দিয়ে, গাড়ির AC টা চালিয়ে দিলো ! আরো ভালো হলো যখন দেখলাম হালকা একটা সেতার এর সঙ্গীত গাড়ির সাউন্ডবক্স এ বাজতে শুরু করলো ! বেড়াতে এসে খাওয়ার আগে এই নবাবী মেজাজটাই যেন বাকি ছিল !
খাওয়ার পর, গাড়ি আবার ছুটতে শুরু করলো ! ইন্দ্রনীল দা, যাওয়ার আগেই বললো যে কাছেই আরেকটা ঝর্ণা আছে ! সেটাও দেখে নেওয়া যাবে ! গাড়ি আবার আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে যাচ্ছে !

কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ল, একটা Sign-Board ! সেখানে, বড়ো-বড়ো করে লেখা – “Lewis Falls” বা “লুইস জলপ্রপাত” !

এই জায়গাটা বেশ সুন্দর ! এই ঝর্ণাটা উচ্চতায় খুব বড়ো নয় ! কিন্তু, চওড়ায় অনেকটাই বড়ো ! আর তীব্র জলের সো-সো শব্দে চারিদিক এ অন্য কিছুর উপস্থিতি বোঝাই যায়না ! দেখা হয়ে গেলে, গাড়িতে বসে আরেক কাপ চা ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে এবারে পরের জায়গায় যাওয়ার জন্য ছুট দিলাম !
এইবারে আমাদের কে Yellowstone এর পাহাড় টপকে তাকে পেছনে ফেলে দিয়ে এগোতে হবে !

এরপরেই, রাস্তা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে থাকে ! রাস্তা টা দেখতে যতই সুন্দর, ততটাই ভয়ঙ্কর ! মাঝে-মাঝে চারপাশের প্রকৃতি দেখতে গিয়ে একটু অসতর্ক হলেই হবে মারাত্মক বিপদ ! তাই ভুলের কোনো অবকাশ এ নেই ! এই রাস্তায় আরো 2 ঘন্টা চলতে থাকলো আমাদের গাড়ি !

এইবারে, যেতে যেতে হঠাৎ আরেকটা সমান্তরাল রাস্তা আমরা ধরলাম ! অনেকটা আমাদের GPS এর ভুলেই চলে গেছিলাম ! আর, গিয়ে সম্পূর্ণ তাজ্জব বনে গেলাম এরকম একটা অদ্ভুত বালির তৈরী পার দেখে ! এর, দুদিকে নদি ! আর মাঝখানে, বালির চর ! আর, তার রং আবার সাদা ! সত্যি, এই প্রথম যে, আমাদের ভুলের মাসুল হিসাবে পুরস্কার পাচ্ছি ! এক কথায় – “অপূর্ব” !

এরপরে, আবার রওনা দিলাম ! সঙ্গে, আরেক বার চা হয়ে গেলো ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে ! এই ব্যাপারটায়, আমার আর ইন্দ্রনীল দাড় বেশ জমে ! সঙ্গে, নোনতা কাজু বাদাম ! প্রায়, ঘন্টা দুয়েক যাওয়ার পর – একটা কান্ড ঘটলো ! ইন্দ্রনীল দা, এবারে অন্য রাস্তা ধরলো ! প্রথম টা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি ম্যাপ দেখে ! খানিক্ষন পর বুঝলাম, ম্যাপ এর সঙ্গে Landscape এর কোনো মিল হচ্ছে না ! “বড়ে গোলাম আলী খাঁ” এর গান শুনতে-শুনতে কখন যে আমরা আরো একটা বিকল্প রাস্তায় চলে গেছি, তা বুঝতে পারিনি ! তার আরো একটা বড়ো কারণ, ওই জায়গায় অধিকাংশ সময়ে কোনো মোবাইল এর নেটওয়ার্ক থাকেনা ! তাই, মোবাইল ফোন এ রাখা Google ম্যাপ ও ঠিক দেখাতে পারেনা, যতক্ষণ না আরেকটা কোনো টাওয়ার পায় !
কিন্তু, এবারেও আমাদের হতাশ হতে হলোনা ! বরং, আমরা Grand Teton এর এমন একটা রূপ দেখলাম, যা খুব ই কম লোকের ই কপালে জোটে !

এইরকম, একটা জায়গায় সূর্যাস্ত দেখতে কি সুন্দর ই না লাগে ! যেটা জানতে পারলাম, যে Grand Teton এর গ্রামের লোকেরা এখানে ছুটির দিন এ সময় কাটাতে আসে ! আর, তাদের পরিচিত রা এসে ছবি তোলে !

তাই আমাদের দেখে, তারা অবাক ই হয়ে যায় ! আরো অবাক হয়ে যায়, এই কথা শুনে – যে আমরা ক্যালিফর্নিয়া থেকে গাড়ি চালিয়ে ঘুরতে এসেছি !
এই ওপরের জায়গাটা আপনাদের কেমন লাগলো নিশ্চই জানাবেন ইচ্ছে করলে ! জানার কৌতূহল রইলো !
এইখানে, ঘন্টা খানেক থেকে আমরা আবার রওয়ানা দিলাম ! এইবারে, আরো 2 ঘন্টা পরে আমরা Grand Teton এর তত্থ কেন্দ্রে পৌছালাম ! ইন্দ্রনীল দা এবং আমি, দুজনেই কিছু গিফট কিনলাম বাড়িতে সাজাবো বলে ! আর, এখানকার সাম্প্রতিক ম্যাপ টা নিয়ে আবার গাড়ি নিয়ে ছুট দিলাম ! আমরা, প্রথমেই, এই পাহাড় এর পেছন দিক এ চলে এসেছি ! এবারে, এই কেন্দ্র থেকে – আমাদের প্রায় 20 মাইল দক্ষিণে গেলে, সেটা সামনের দিকের রাস্তার সঙ্গে মিশবে ! তারপর, এই রাস্তার সমান্তরাল সেই রাস্তা ধরে উত্তরের দিক এ যেতে হবে ! তার, বাঁ দিক এ পরবে, Grand Teton পাহাড়, আর ডান দিকে পরবে, একটি পুরোনো গ্রাম ! যা, 1900 সাল থেকে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে !
এই যাওয়ার সময়ে রাস্তার কিছু কিছু জায়গা বেশ শরু ! হঠাৎ ই, দূরে দেখলাম আরেকটু এর থেকেও বেশি সরু রাস্তা আমাদের রাস্তার থেকে বেরিয়ে গেছে ! অনেক গাড়ি সেটা ধরে নিচে নেমে যাচ্ছে ! এতক্ষনে, আমরা দুজনেই অভ্ভস্থ হয়ে গেছি ! নিশ্চই, ভালো কিছু অপেক্ষা করছে ! তাই দুজনেই মুচকি হেসে, গাড়িকে সেই দিকেই নিয়ে গেলাম ! এই রাস্তাটা, মাটি থেকে কম পক্ষে 1000 মিটার নিচে নেমে এসে একটা অত্যন্ত সুন্দর উপত্যকায় পড়লো ! আর, সেই উপত্যকার মধ্যে দিয়ে একটা শান্ত নদি বয়ে চলেছে ! আবার কিন্তু আমরা হতাশ হলাম না ! বরং, মনে হলো – রং-তুলি দিয়ে কোনো শিল্পী তার আরেকটি অসামান্য সৃষ্টি সবে মাত্র এঁকে রেখে গেছেন !

এইরকম, একটা জায়গায় মাউন্টেন লায়ন ঘোরাঘুরি করে ! তাই, সেটা একটা সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে ! ওই জায়গায় কিছুক্ষন থেকে আমরা গাড়িতে উঠে এবারে আমাদের Grand Teton-এর শেষ লক্ষের দিকে এগোতে থাকলাম !
দুপুর 3 টের মধ্যে আমরা সেই গ্রাম এ পৌঁছে গেলাম ! প্রকৃতির সাথে মানুষ যে কত সুন্দর ভাবে একসাথে থাকতে পারে, তা, এই গ্রাম টা না দেখলে কেও বিশ্বাস ই করতে পারবেনা !

আমাদের গাইড বললেন যে, এটা কয়েকটি খ্রীষ্টান পরিবার নিয়ে করা এই গ্রাম ! অবশ্য, বর্তমানে এনারা এই গ্রাম টি কে একটি সংগ্রহশালায় পরিবর্তন করে, নিজেরা অপেক্ষাকৃত একটু দূরে চলে গিয়ে অন্য জায়গায় বসবাস শুরু করেছেন ! যাতে, এই জায়গায় দূষণ কম থাকে ও প্রকৃতি নিজের মতো বিকাশ করার সুযোগ পায় !
এই গ্রামটি তে বসবাস যোগ্য প্রায় সব কিছুই ছিল, যেমন খামার ঘর, থানা, গুদাম ঘর ও আরো অন্নান্ন দরকারি দপ্তর ! সব কিছু দেখে মনে হলো, আমাদের এই আসাটা সার্থক !
এরপরের পর্বে, আমি এখান (Grand Teton) থেকে Twin Falls শহর যাওয়ার অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবো !
আশা করবো, আমার এবারের অভিজ্ঞতা আপনাদের ভালো লেগেছে ! |