পটকার প্রেম

প্রথম পর্ব : |
পটাই ওরফে পটকা হলো আমার ছোটবেলার বন্ধু ! বলতে গেলে হরিহর-আত্মা ! আমি যেমন ওকে ছাড়া কিছু করতাম না, সেরকম ও তাই করতো ! যদিও, ও বয়সে আমার থেকে তিন-বছরের বড়ো ! কিন্তু, বন্ধুত্তে ঐসব থাকেনা ! আমাদের এপার্টমেন্ট হলেও বহু পুরোনো দিনে তৈরী ! তাই, এখানকার একটা বিশেষত্ব আছে ! আর সেটা হলো সাবেকি-কলকাতার পুরোনো পাড়াগুলোর মতোই এখানে একে অন্যের সব খবর রাখে ! সত্যি কথা বলতে কি, অনেক সময় বাড়ির লোকেরা হয়তো পরে জানতে পারে তাদের পরিবারের কারোর না বলা কথা ! যাই হোক, এবারে আবার আমাদের আলোচনার বিষয় বস্তুতে ফেরা যাক !
সময়টা নব্বই-এর শুরুতে ! তখন, সদ্য ফিনান্স-মিনিস্টার ডক্টর মনমোহন সিংহ-এর নেতৃত্বে আমাদের দেশ সবে গ্লোবালাইজেশন-এ পা রেখেছে ! আর্চিস, হলমার্ক-এর মতো বিলাতি সংস্থাগুলি নানা অনুষ্ঠানে রং-বেরঙের কার্ড দিয়ে তাদের প্রিয়জনকে খুশি করার পরামর্শ দিচ্ছে ! সবে দূরদর্শন ছাড়াও M-Tv ও আরো অনেক চব্বিশ-ঘন্টার নতুন চ্যানেল চলা শুরু হয়েছে ! অর্থাৎ, সব মিলিয়ে যুগে একটা বিশাল পরিবর্তন শুরু হয়েছে ! এসময়ে, আমাদের পাড়ার পটাই থুড়ি পটকা পিছিয়ে কেন থাকবে ? তখন, এই ক্লাস এইট-এ পড়ি ! সদ্য প্রেম সম্পর্কে জানতে শুরু করেছি ! আর, আমাদের দুঃখ হলো – চিরাচরিত ছেলেদের স্কুল-এ পরে যখন চাতক-পাখির মতো চোখ এক-ফোঁটা জলের জন্য বসে থাকে, ঠিক সেই সময়ে পাড়াতেই বাংলা পড়তে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে একটু আড্ডা মারা তো হলো – মেঘ না চাইতেই জল ! সেইরকম এক-ক্লাসে আমার সহপাঠিনী ছিল – মৌত্রীসা ! মেয়েটা দেখতে-শুনতে বেশ ভালো ! আর, যেটা ভালো সেটা হলো – খুবই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড ! কিছুদিনের মধ্যেই আমার সঙ্গে ওরও খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় ! একদিন কোচিন থেকে ফিরছি – একসাথে ! রাস্তায় একটা রকে পটকা বসে ছিল ! ওকে দেখেই আমি হাত নাড়তেই মৌও তাকালো, আর একটু দুস্টু-মিষ্টি হাসি ওর দিকে দিতেই পটকা “ট্রিপল সামার-সল্ট”খেয়ে বসলো ! অর্থাৎ, ওর ভার্সন অনুযায়ী মেয়েটাও ওকে ভীষণ ভালোবাসে – আর ও তাকে ! প্রব্লেমটা শুরু হলো – অন্যদিকে ! যতই ও ফড়িং এর মতো ফুড়ুৎ-ফুড়ুৎ করে লাফাক না কেন, আসলে কিন্তু বেশ ভীতু আর লাজুকও ! তাই, আমাকে বললে – “এই ভাই, তুই একটু বলে লাইনটা জুড়ে দে না ? তোর তো ভালো বন্ধু !” আমি বললাম – “দেখ ! তোরা দুজনেই আমার খুব ভালো বন্ধু ! কাজেই, পরে কোনো গোলমাল হলে, আমি সেই ঝামেলায় থাকতে চাই না ! তোর চক্করে পরে বাড়িতে ঝাড় খাই আর কি ! তোর যা ইনফরমেশন লাগবে, যতটুকু জানি বলে দেব ! কিন্তু, আমাকে এই-নিয়ে কিছু বলবি না ! ওটা তোর নিজের দায়িত্ব ! তোকে নিজেকেই করতে হবে ! আর, তাছাড়া নিজে চেষ্টা করে মেয়ে পটাতে পারলে তার স্যাটিসফ্যাকশন অনেক বেশি !” একথা শুনে পটকা শুরুতে একটু হতাশ হলেও পরে ঠিক করলো – ও নিজেই আয়োজন করবে ! তবে, আমি ওকে কিছু দরকারি তথ্য আর উপদেশ দেব ! মানে আমি, যার কিনা প্রেমে কোনো অভিজ্ঞতা নেই – শুধু কোচিনে কয়েকজনের সাথে কথা বলা শুরু করেছি – সে এখন “লাভ-গুরু” ! একটা এক্সসাইটমেন্ট আর জ্ঞান দেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম ! ঠিক করা হলো – আর্চিস থেকে গ্রিটিংস-কার্ড কিনে পটকা তার মনের গুরুত্বপূর্ণ কথাটা মৌকে বলবে ! আর, সেইসময় যেটকু টিভি বা রেডিওতে বিজ্ঞাপন দেখছি বা শুনছি, এইভাবে প্রপোস করলে নাকি মেয়েরা এক কথাই রাজি হয়ে যাবে – সেই কনফিডেন্সের জোরে এগিয়ে চললাম আমাদের সম্মিলিত অভিযানে ! |
দ্বিতীয় পর্ব – কার্ড অভিযান : |
ঠিক হলো ফুলবাগানে, শ্যামাপ্রসাদ-স্কুলের সামনে একটা নতুন আর্চিস-গ্যালারি খুলেছে ! ওখানে গিয়ে দেখে একটা রোমান্টিক-কার্ড কিনতে হবে ! তার সঙ্গে কয়েকটা সদ্য বাজারে আসা রং-বেরঙের রোটোমাক পেনও কিনতে হবে ! পটকার প্রেম নিবেদন কি এতোই ঠুনকো, যে শুধু মাত্র নীল বা কালো-কালী দিয়ে লিখবে ! সেখানে ফ্লুরোসেন্ট কালার-এর সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনি ও আরো অনেক কিছু থাকবে ! জিতু বললো – “ভাই, একটু কার্ড-এর মধ্যে চকমকি দিবি না ? ওই যে কি একটা প্যাকেট খুলে আজকাল অনেকেই লাগায় কার্ডে ! দেখতে দারুন লাগে ! তাই, সবাই মিলে কত খরচ হবে তার একটা রীতিমতো হিসাব কষা হলো ! পটকা ওর বাংলা-খাতার কয়েকটা পেজ ছিড়ে নিয়ে এসে প্রতিটা জিনিসের নাম ও আনুমানিক একটা খরচের হিসাব করে রাখলো ! তারপর, দু-সপ্তাহ ধরে স্কুল যাওয়ার টিফিন-এর খরচ বাঁচিয়ে, আর বাজার থেকে দশ বা কুড়ি-পয়সা বাঁচিয়ে সমস্ত টাকাটা জোগাড় করলো ! আমরা যদিও নিজেরা কিছু করবো না ! কিন্তু, মনের মধ্যে একটা এক্সসাইটমেন্ট আর ভয় ঘুরপাক খেতে লাগলো ! কিছু উল্টোপাল্টা হলে পটকা একা আরম-ধোলাই খাবে না ! আমরাও খাবো সাথে থাকার জন্য !
যাই হোক, দিনখন এলো ! পটকা আমায় বললো – “আমার আজ ক্লাস একটা পিরিয়ড-এর আগে শেষ হয়ে যাবে ! তুই কখন বেরোবি ?” আমি বললাম – “তাহলে, আমি ওই একই সময়ে বেরিয়ে যাবো !” সত্যি কথা বলতে কি – যত সময় এগিয়ে আসছে, ততই যেন আমার মনের মধ্যে একটা চাপা-উত্তেজনা বেরিয়ে আসছে ! শেষপর্যন্ত ক্লাস করে বেরিয়ে দেখি পটকা দাঁড়িয়ে আছে স্কুল-এর বাইরে ! আমাকে দেখেই বললো – “চল ! দেরি হয়ে গেলে ভালো কার্ড পাওয়া যাবে না !” দুজনে মিলে হেঠে গেলাম ওই আর্চিস-গ্যালারিতে ! গিয়ে দেখি – কি বিশাল দোকান ! আমাদের, এর আগে এতো বড়ো দোকানে ঢোকার কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না ! ঢুকে দেখি কি সাজানো, আর লাইট-এ চোখ যেন ধাঁধিয়ে যায় ! আর, কত্ত কার্ড ! প্রায় সব কিছুর জন্য একটা করে সেকশন আছে, যেখানে কমপক্ষে একশো করে কার্ড আছে ! গিয়ে এইসব দেখে আমাদের কনফিডেন্স সোজা গলা থেকে হাঠুতে নেমে গেছে ! আমাদের দেখে দোকানের একজন এমপ্লয়ী ইংলিশ-এ জিজ্ঞাসা করলো – “আমরা কি ধরণের কার্ড চাই ?” একে তো মনের মধ্যে ভয়, লজ্জা – তার ওপর, আমাদের থেকে বয়সে বড়ো একজন কাকু জিজ্ঞাসা করছেন যা, সেটা বলতে গিয়ে আমাদের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেলো ! অনেক কষ্টে আমতা-আমতা করে বললাম – “কাকু, ওই – ও বন্ধুর জন্য গিফট-কার্ড দেবে ! তাই, কার্ড দেখছি !” কাকু হেসে বলে উঠলেন – “কার জন্য ?” আমি বললাম – “মৌ !” কাকু হেসে বলে উঠলেন – “ওহ বাবা ! এই বয়সেই ?” তারপর, একটু মুচকি হেসে আমাদেরকে সেই তাকে আঙ্গুল-দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ! সেটা দেখে যেন আমরা দুজনে হাফ-ছেড়ে একটু স্বস্তি নিলাম ! দুজনে গুটি-গুটি পায়ে গেলাম ! শেষে পটকার পছন্দের গোলাপের ছবি লাগানো কার্ডটা নেওয়া হলো ! এই কার্ডটায় একমাত্র একটা ফাঁকা-পাতা আছে ! পটকা সেখানে নিজের মনের-প্রাণের সুখ-দুঃখ লিখে ওর মৌকে প্রেম নিবেদন করবে ! এইবারে, কার্ডের সঙ্গে নতুন পেন আর জিতুর কথামতো চিকচিকি নিয়ে ক্যাশিয়ার-এর কাছে গেলাম ! ক্যাশিয়ার-কাকু দেখে একটু মুচকি হেসে বললো – “সাড়ে-দশ টাকা ! আর, স্কুল-এর স্টুডেন্টদের জন্য এক টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে ! তাই হলো সাড়ে ন-টাকা !” টাকা দিয়ে সেদিনকার মতো বাড়ি ফিরলাম দুজনে ! আমাদের, পরের এডভেঞ্চার হবে সেই সপ্তাহের শনিবারে ! আপাতত, হাথে দুদিন রয়েছে প্ল্যান করার ! |
তৃতীয় পর্ব – পরিকল্পনা : |
এইবারে, আমাদের শুরু হলো কি করে ওই কার্ড দেওয়া হবে ! শান বললো – “ভাই, সঙ্গে একটা ডেয়ারি-মিল্ক দিতে হবে কিন্তু !”
জিতু বললো – “তুই একদম চাপ নিবি না ! মনে করবি কোনো ব্যাপার নয় ! আর, তাছাড়া তুই হোলি বাঙাল ! বাঙাল হয় “বাঘের-বাচ্চা” ! ভেবে দেখ তোর বাবা-মা ওই দেশ থেকে কত কিছু লড়াই করে এসে এখানে আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়েছে ! ওরা তোর জন্য এতো কিছু করলো – আর তুই করতে পারবি না ?” এই কথা শুনে আমরা সবাই যেন ইস্টবেঙ্গল-এর পি.-কে. ব্যানার্জীর মতো ভোকাল-টনিক খেয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম যে পটকাকে করতেই হবে ! এ-শুধু পটকার জয় না – আমাদের জয় – পশ্চিমবঙ্গের সব ছেলেদের জয় – ভারত তথা বিশ্বের সব ছেলেদের জয় ! শুধু প্রশ্নটা হলো যাকে নিয়ে করা – সে যদিও সেই মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে জোশ লাগিয়ে যতটাই আগ্রহ দেখিয়েছিল, যত দিন এগিয়ে আসতে থাকলো তার মনের জোরও ঠিক সেই হারেই পড়তে থাকলো ! অবশেষে, ঠিক হলো – দেওয়ার পদ্ধতি “গৌণ” ! আসল, উদ্দেশ্য “দেওয়া” ! যদি, সেটা হয় – তাহলেই বিশ্বের সকল ব্যাচেলরদের জয় হবে ! এ যেন ইস্ট-বেঙ্গল আর মোহন-বাগানের খেলার থেকেও অনেক বেশি আবেগপূর্ণ ! তাই, পটকার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রইলো কিভাবে ও দেবে ! |
চতুর্থ পর্ব – মাহেন্দ্রক্ষণ : |
অবশেষে, সেই দিনের আগমন ! আজ কিছু একটা এসপার-ওসপার হবে ! সকালে কোচিনে আমি একটু গম্ভীর ছিলাম ! সবাই জিজ্ঞাসা করলে আমি বললাম – “আসলে শরীরটা একটু খারাপ ! তাই, ভাবছি দুপুরের ক্লাসটা আজ করবো না !”
মৌ বললো – “তোর ব্যাপার কি বলতো ? তুই তো এতো চুপ থাকিস না ?” আমি বললাম – “নারে ! আজ শরীরটা খুব একটা ভালো নেই !” মৌ বললো – “আজ রেস্ট নে ভাল করে ! বিকেলের ক্লাসে তুই না গেলে – আমি তোকে বাড়িতে গিয়ে খাতা দিয়ে আসবো ! তুই কপি করে নিস !” আমি মনে-মনে ভাবছি – “পটকা যে কি করবে, আর তারপর তুই খাতা দিবি – না আমাকে এসে ঝাড় দিবি – তা মা গঙ্গাই জানে !” বাড়ি ফিরে মার হাথে তৈরী চিংড়ি-মাছের মালাই কারিটা ভালো করে খেয়ে নিলাম ! মনে হচ্ছে যেন পটকার সাথে আমিও যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যাচ্ছি ! ভবিষ্যত কি আছে জানি না ! কথা ছিল পটকা আমায় ঠিক বিকেল সাড়ে চারটেয় ডাকবে ! আমি প্রায় চারটা থেকে পাঁচটা অব্দি অপেক্ষা করে শেষে ওর বাড়িতে হাজির হলাম ! গিয়ে দেখি ওর দিদার গুড়াকুর একটা সরু-লম্বা কৌটো খুঁজে পাচ্ছে না – সেই নিয়ে সবাই ব্যাস্ত ! ওর দিদা গুরাকু না দিলে আবার বাথরুম যেতে পারেনা ! তাই, ওটা ভীষণই দরকারি ! আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ওর মা বললো – “ওতো প্রায় আধঘন্টা হলো বেরিয়ে গেছে ! বললো তো ছাদে যাচ্ছি !” এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার যে – আমাদের বিল্ডিং-এর ছাদ থেকে টপকে গিয়ে পাশের বিল্ডিং-এর ছাদে চলে যাওয়া যায় ! আর, সেই বিল্ডিং পরে একটা শুরু গলি ! আর, তার পাশের বিল্ডিংটাই হলো মৌ-দের ! কাজেই, আমার বুঝতে বেশি অসুবিধা হলো না যে পটকা ছাদ-অভিসার করবে ! যদিও, তখন আমি ঠিক বুঝলাম না যে ও কি করে ওটা মৌকে দেবে ! আমি ওর মাকে – “আচ্ছা !” – বলেই দৌড় দিয়ে ছাদে উঠতে থাকলাম ! প্রায় ক্ষিপ্রতার সঙ্গে মিনিট-পাঁচেকের মধ্যে ছাদে উঠে পাশের ছাদে তাকাতেই দেখলাম পটকা ও সঙ্গে অম্বর ! আমি ওদের কাছে গিয়ে বললাম – “কিরে তুই বললি আমায় ডাকবি – ডাকলি না তো ?” ওরা দুজনে মিলে আমায় চাপা গলায় বলতে থাকলো – “চুপ..প ! নিচে বসে পর !” আমিও চট করে পাঁচিলের পেছনে লুকিয়ে বললাম – “কি ব্যাপারটা বলতো ? করছিস কি ?” ওরা বললো – “ডাকতে গিয়ে দেখি তোর বাবা বসার ঘরে কি করছে, ওই দেখে আর না ডেকে পালিয়ে এসেছি !” এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার – যে আমার বাবা বেশ রাশভারী বলে সবাই একটু সাবধানে কথা বলে ! পটকা বললো – “প্রতিদিন মৌ আর চারতলার এক বৌদি বিকেল সাড়ে-পাঁচটায় ঘুরতে আসে ! তখন, আমি মৌকে আমার প্রেম নিবেদনের ব্রম্হাস্ত্র দেব !” আমি বললাম – “আচ্ছা ! সেতো বুঝলাম ! কিন্তু, কিভাবে ?” পটকা বললো – “অপেক্ষা বন্ধু ! এমন ফন্দি এঁটেছি – ধরাও পড়বো না – আবার জানানো হবে !” আমি তো শুনে পুরো তাজ্জব ! বলে কি ! যা আমরা এতদিন পাঁচ-বন্ধু মিলে বার করতে পারিনি – পটকা একা বার করে ফেলেছে ! দেখা যাক ! সত্যি কথা বলতে কি – দৌড়ে ছাদে ওঠা আর তার সাথে এক্সসাইটমেন্ট-এ যেন হার্টবিট কয়েকগুন বেড়ে গেছে ! ঠিক পাঁচ-মিনিট পর মৌ ও সুমি-বৌদি ছাদে উঠেছে ! আমার সাথে ওর আলাপ হয়েছিল মৌয়ের বাড়িতেই ! এইবার দেখি পটকা পকেট হাতড়ে একটু সরু-লম্বা কৌটো বার করলো ! আমি বললাম – “এই ! একিরে ? এটা তো তোর দিদার গুড়াকুর ….” কথা শেষ করার আগেই দেখি পটকা টিপ করে ছুড়লো সেই কৌটো ! এটা বুঝতে বাকি রইলো না কৌটোর মধ্যে নির্ঘাত কিছু আছে ! কিন্তু, তখনও আমি জানিনা কি আছে ! এইবার, চোখ দুটো শুধু পাঁচিলের ওপরে রেখে দেখতে থাকলাম ! কৌটোটা ঠিক ইসরোর রকেটের মতো অরবিটে উঠে ল্যান্ড করতে গিয়ে সুমি-বৌদির কপালে ল্যান্ড করলো ! আর তারপরে একটা চিৎকার – “ও বাবাগো !” আর কৌটোটা সুমি-বৌদির মাথায় লেগে মৌদের ছাদে একটু দূরে ছিটকে পড়লো ! ওই দেখেই আমরা সবাই মাথা নিচু করে বসে পড়লাম ! বুঝলাম – “মিশন-কেলেঙ্কারি” শুরু হয়েছে ! আর একটা মারও আমাদের বাইরে পরবে না ! কোনোরকমে হাতড়ে-হাতড়ে হামাগুড়ি দিয়ে অন্য-বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির কাছে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম ! আর, তখন পাশের-বিল্ডিংয়ের ছাদে অনেকেই উঠে আসছে ! সেসব গলা আমরা শুনতে পারছি ! অম্বর বললো – “ভাই ! এবারে, আর বেশিক্ষন এ বিল্ডিংয়ে থাকলে ওরা চলে এসে ধরে ফেলবে ! এবারে পালা !” কোনোরকমে পড়ি-কি-মরি করে ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নেমে একতলায় এসে পাঁচিল টপকে আমাদের বিল্ডিংয়ে চলে এসে যে যার মতো ঘরে ঢুকে গেলাম ! মা আমায় দেখে জিজ্ঞাসা করছে – “কিরে ? এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি ?” আমি বললাম – “না, পটাই-এর পরীক্ষা ! তাই ! আজ তাড়াতাড়ি শেষ করে চলে এলাম !” কিন্তু, মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ! আর, সেই সঙ্গে বুকটা ঢিপ-ঢিপ করছে ! ভাবছি, কি পেটানি টাই না খাবো ওই বিল্ডিং থেকে কেও এলে ! সারা সন্ধেটা বাধ্য ছেলের মতো সব পড়াশোনা করে তাড়াতাড়ি করে খেয়ে শুয়ে পড়লাম ! আর মনে-মনে ভাবতে লাগলাম – “এবারেরটাই উৎরে গেলে আর জীবনে প্রেমের কথা মুখেও আনবো না !” |
পঞ্চম (শেষ) পর্ব – পরবর্তী অধ্যায় : |
পরের দিন সকাল সাড়ে দশটায় আমার ঘরে করা নাড়া ! আমার তো বুক ঢিপ-ঢিপ করছে ! গিয়ে খুলে দেখি – মৌ !
আমি যেন কিছুই জানিনা এমনভাবে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম – “তুই খাতাটা এনেছিস ?” ও আমায় খাতাটা দিয়ে বললো – “তুই একটু বাইরে আসবি ?” আমি বললাম – “হাঁ !” – বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওকে বললাম – “হাঁ ! বল !” ও তখন আমায় বললো – “জানিস তোর ওই পটকা কি করেছে ?” আমি বললাম – “কি বলতো ?” তখন মৌ আমায় সব ঘটনাটা খুলে বললো ! আরও বললো যে কৌটোটা ওদের ছাদে পরার পর ও পা দিয়ে একটা কোনায় পাঠিয়ে দেয় ! আর পালানোর সময় পটকাকে দেখে ফেলে ! তবে সঙ্গে আর কে ছিল ও দেখতে পাইনি সন্ধ্যের জন্য ! পরে, রাতে এসে ও ওই কৌটোটা আবার কুড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মাঝরাতে গিয়ে খুলে দেখে ! তাতে, একটা আর্চিসের কার্ড পাকিয়ে ওই কৌটোর মধ্যে রাখা হয়েছিল ! আর, সঙ্গে দুটো এক্লাইর্স-লজেন্স ! বুঝলাম পটকা জায়গার উপযুক্ত ও পরিমিত ব্যবহার করেছে কৌটোটার ! ওর দিদা জানলে কত গর্বিতই না হবে ! মৌ রেগে গিয়ে বলছে – “ওর এটুকু ক্ষমতা নেই, আমাকে এসে দেওয়ার ! যদি কেও খুঁজে পেতো, তাহলে বলতো কি বাজেই না হতো !” আমি বললাম – “আচ্ছা তুই কিছু মনে করিস না ! আসলে ও তোকে ভীষণ পছন্দ করে ! একটু ছেলেমানুষি করে ফেলেছে ! তুই রাগ করিসনা ! আর, এ-নিয়ে ওকে কিছু বলিস না ! বা, তোর বাড়ির থেকে যদি আর কিছু না বলে !” মৌ বললো – “ধুর ! বাড়িতে কেন বলবো ? তবে, আমি পটকার দৌড় বুঝে গেছি ! শুধুই হাবভাব ! “ ওর থেকে আস্বস্ত হওয়ার পর যেন আমারও একটু বুকে বল এলো ! যাক, আর বেশি কিছু হবে না ! মৌ চলে যাওয়ার পর আমি পটকার বাড়িতে গিয়ে করা নাড়লাম ! ওর মা দরজা খুলে বললো – “কিরে তোদের সাথে পটাইয়ের ঝগড়া হয়েছে নাকি ?” আমি বললাম – “নাতো কাকিমা ! কেন বলোতো ?” ওর মা বললো – “অন্য দিন সকাল নটা বাজলেই বাইরে খেলতে যাওয়ার কথা বলে ! আজ এগারোটা বাজতে চললো ! এখনো পড়ছে !” আমি বললাম – “আচ্ছা ! দাড়াও ওকে নিয়ে বেরোচ্ছি !” মনে-মনে ভাবলাম – খবরটাও তো দিতে হবে ! ওর পড়ার ঘরে গিয়ে দেখি ও নেই ! আমি গিয়ে “পটাই” বলে ডাকতেই দেখি খাটের তলা থেকে পটকার চোখ উঁকি মারছে ! আমাকে দেখে নিচ থেকে বেরিয়ে এসে বললো – “ভাই কাল রাত থেকে যেই কড়া নাড়ছে – তখনই আমি চোখে অন্ধকার দেখছি !” আমি ওকে বললাম – মৌ এসে কি বলেছে ! ও শুনে বললো ভাই – “বার খেয়ে বাঘাযতীন হয়ে গেছিলাম ! আর নয় ! ওকে জানানোর দরকার ছিল ! জেনে গেছে ! এবারে ওর যদি ইচ্ছা হয়তো, বলিস আমায় এসে বলতে ! তবে এগোবো ! নাহলে আর নয় !” শুনে মনে হলো – এবারে, আমাদের জীবনে আবার ব্যাচেলর লাইফের দ্বিতীয়-কিস্তি শুরু হতে চলেছে ! আপাতত পড়াশোনা আর খেলাধুলাটাই হয়তো আমাদের জন্য ঠিক হবে ! |
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ : সমস্ত ছবি আমার নিজের তোলা – এই ছবির সাথে গল্পের চরিত্রের কোনো মিল নেই ! নেহাৎ প্রচ্ছদের কারণে প্রতীকী হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ! |
বিশেষ ঘোষণা : |
আমার গল্প কেমন লাগলো তা এখানে একটা ছোট্ট-কমেন্টস দিয়ে জানালে খুব ভালো লাগবে !আশা করি আপনারা সবাই ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন ! @কপিরাইট – সাত্যকি দে |
Subscribe বোতাম এ ক্লিক করুন আপনার ইমেইল দিয়ে, ও আরো অনেক ছবির সাথে ঘুরতে যাওয়ার গল্প পড়ুন ! |