আমার শেষ ঘোরার অভিজ্ঞতা ছিল ২০১৫ সালের লম্বা সফর মিয়ামি, কী-ওয়েস্ট, সি-ওয়ার্ল্ড আর নাসাতে ! মাঝখানে, প্রায় দেড়টা বছর কেটে গেছে ! এর মধ্যে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে ! আমি বিয়ে করেছি ! এখন, তাই অনেক জায়গায় তার মধ্যে আমরা ঘুরেছি ! ঠিক হয়েছিল, ২০১৭-এর জানুয়ারী মাসে আমি বৌকে নিয়ে কলকাতা ঘুরতে যাবো ! বিয়ের পর সেটা আমার প্রথম কলকাতায় ফেরার পালা ! ভীষণ ই উত্তেজিত সেই ট্রিপটা নিয়ে ! টিকেট কাটা হয়ে গেছে ! বাড়িতে সবাই দিন গুনছে ! তার ওপর রাজীব দা, মানে আমার জামাই বাবু – পাহাড়ে ওর নিজের হোটেল এ সব ব্যবস্থা করে রেখেছে ! আমরা কলকাতায় গেলে তার ই ফাঁকে দার্জিলিং, সিকিম ঘুরে আসবো ! কারণ, আমি কোনোদিন যায়নি ! হঠাৎ ই আমার ম্যানেজার খবর দিলেন যে বিশেষ কারণে আমার ছুটিটা বাতিল করতে হবে ! এবং, যদিও আমি আমার যাওয়ার ব্যাপারটা প্রায় মাস তিনেক আগে জানিয়েছিলাম – কিন্তু, তাও সেটা আটকানো গেলো না ! শুনে, আমাদের দুজনের মন খুব-ই ভেঙে গেলো ! অগত্যা, বাড়িতে জানাতে হলো ! শুনে, সবাই ভীষণ উপসেট ! বাড়ি বলতে – দিদি আর জামাই বাবু ! যদিও, বাকি সব জারততো, পিসতুতো দাদা-দিদিরাও শুনে মন খারাপ করে বসলো ! তার কারণ ২০১৫-তে আমার বিয়ে ও তারপরে একদিন সব ফ্যামিলি মেম্বার মিলে পিকনিক টাকে ঘিরে ভীষণ মজা হয়েছিল ! এবারেও, ঠিক করেছিলাম – সেরকম একটা কিছু করবো ! শেষ পর্যন্ত, দিদি কেই এখানে আস্তে বলে দিলাম ওই বছরেই শীতের একটু আগে ! সেই মতো, সব প্ল্যান হয়ে গেলো ! তার পরিকল্পনা স্বরূপ ২০১৭-এর এই ট্রিপটা হয়ত আমার সব থেকে বড়ো ম্যারাথন ট্রিপ এর মধ্যেই পরবে !
ঠিক হলো – আমার দিদি আর রাজীব দা আসবে কলকাতা থেকে সরাসরি নিউ-ইয়র্ক এ ! আমরা, সান-ফ্রান্সিস্কো থেকে যাবো নভেম্বর এর ৭-তারিখ এ ! নিউ-ইয়র্ক এ পৌছাবো ৭ তারিখ এই গভীর রাতে ! আর, ওরা নিউ-ইয়র্ক এর সময় অনুযায়ী ৮ তারিখ সকাল সাড়ে ১০-টায় পৌঁছাবে ! ঠিক করা হলো – ওরা ওখান থেকে ক্যাব নিয়ে সোজা আমাদের হোটেল এ চলে আসবে !
সেই কথা মতো, অফিসের সব ঝামেলা মিটিয়ে সকালে ব্রেকফাস্ট করে সান-রামোন থেকে রওয়ানা দিলাম ! আমরা, দুজনেই ভীষণ এক্সসাইটেড ! কতদিন ধরে আমরা দুজনে এই ট্রিপটা প্ল্যান করেছি, যাতে দিদিরা খুব ভালো করে বিশেষ-বিশেষ জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে পারে !
প্রথম দিন :
এয়ারপোর্ট এ প্রায় ঘন্টা দেড়েক এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম ! আরো এক ঘন্টা লাগলো সিকিউরিটি চেক-ইন করতে ! তারপরেও, আমাদের হাথে ঘন্টা দেড়েক আছে প্লেন ছাড়তে ! ওই দিকে, দিদিরাও তখন কলকাতা থেকে রওয়ানা হয়ে, সবে দুবাই এ সিকিউরিটি চেক-ইন করে নেক্সট ফ্লাইট এর জন্য বসে আছে ! এয়ারপোর্ট-এর Wifi দিয়ে ভিডিও কল করে একটু ইয়ার্কি আর গল্প সেরে নেওয়া হলো ! তারপর, আমরা দুজনে ওখানে এক রেস্তুরাঁ থেকে বুড়িতো আর আমার মিসেস একটা এগ-স্যান্ডউইচ অর্ডার করলাম ! সাথে, আমি কফি আর ও দার্জিলিং চা-তে চুমুক দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম !
কিছুক্ষন পরে আমাদের বোর্ডিং এর কল এলো ! আমরা, দিদিদের জানিয়ে উঠে পড়লাম আলাস্কা বিমান-এ ! নিউ-ইয়র্ক যেতে এখন লাগবে প্রায় ৬ ঘন্টা ! এবং, সেটা ডাইরেক্ট ফ্লাইট বলে ! নাহলে, আরো বেশি সময় লাগে ! প্লেনে উঠে সব হ্যান্ড লাগেছ রাখার কুড়ি মিনিট এর মধ্যে প্লেন টা ছেড়ে দিলো !

এর পরে প্লেন এর মধ্যে মাঝে-মাঝে খাবার খাওয়া আর দুবার বাথরুম যাওয়া ছাড়া বাকি সময়টা হয় কোনো মুভি দেখা বা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম ! স্থানীয় সময়ে রাত সাড়ে ১০-টায় আমরা নিউ-ইয়র্ক এ পৌছালাম ! নভেম্বর মাস বলে আমরা ইতিমধ্যে মোটা জ্যাকেট, গ্লাভস পরে নিয়েছি ! আমার ইস্ট-কোস্ট এ থাকার অভিজ্ঞতা আছে ! আবার, ওই দিকে আমার দিদিও কাজের সুবাদে বেশ কিছুদিন শিকাগো তে থেকে গিয়েছিলো ! তাই, আমি জানি ও ভালোভাবে তৈরী হয়ে আসবে ! আর, রাজীব দার হোটেল পাহাড়ে থাকায়, ওর ও ঠান্ডা সম্পর্কে ভালোই অভিগ্যতা আছে ! একমাত্র, আমার মিসেস এর ই ঠান্ডার কোনো অভিজ্ঞতা নেই ! এইবারে, এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে উবার বুক করে দিলাম ! মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে উবার এসে গেলে মালপত্র তুলে আমরা হোটেল এর দিকে রওয়ানা দিলাম ! এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল এর দূরত্ব মিনিট কুড়ি-এর মতো ! তাই, রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে আমরা হোটেল এ পৌঁছে গেলাম !
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে আমরা একটা সুইট বুক করেছিলাম, যার ভিউটা নাকি ভীষণ সুন্দর ! এখন, আর বলতে আপত্তি নেই – সত্যি তাই ! সুইট টায়, দুটো রুম আর দুটো বাথরুম ! বসার জন্য একটা বিশাল ড্রয়িং-কাম ডাইনিং ! এছাড়াও, আছে একটা ওপেন কিচেন ! যদিও, আমরা দুপুরে বাইরেই খেতাম ! রাতে কিন্তু বাড়িতেই তিনদিন খেয়েছি শেষের দিন ছাড়া !
প্রথমেই, বলতে হয় যে আমরা ছিলাম পঁয়তাল্লিশ-তলায় ! একেবারে, বাঁদিকের ঘর থেকেও হাডসন নদী ও উল্টোপারে নিউ-ইয়র্ক এর প্রসিদ্ধ স্কাই-লাইন কে দেখা যাচ্ছে ! |
 |
আমার, ক্যামেরা নিয়ে বার করে চোখে লেন্স-টা লাগাতেই বুঝলাম সামনেই দাঁড়িয়ে এম্পায়ার-স্টেট বিল্ডিং !
এইবারে, বসার ঘরের পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে আমরা দুজনেই ভিউ দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থাকলাম ! পরিষ্কার, হাডসন নদীটা দেখা যাচ্ছে আর তার ওপরে ব্রুকলিন ব্রিজ !
আমাদের রুম এ সামনে উঁকি মারতেই দেখি হোটেল এর সামনে আছে হাই-স্পিড ট্রাম !
সেই রাতে, হোটেল এ আমরা দুজন ডিনার করে শুয়ে পড়লাম ! পরের দিন সকালে উঠে আমার মিসেস মোবাইল-এ চেক করে নিয়ে উবের ধরে একটু দূরে থাকা টার্গেট স্টোর থেকে যাবতীয় দরকারি খাবার-দাবার কিনে নিয়ে চলে এলো ! দিদিরা আসলে খিদে পেয়ে যাবে বলে ও অল্প তেল এ ম্যাকারনি আর ফিশ ভাপে বানিয়ে নিলো ! |
দ্বিতীয় দিন :
এইবারে, দিদিরা নিউ-ইয়র্ক এ নেমে ফোন করে জানালো যে ওদের ইমিগ্রেশন ফর্মালিটিজ হয়ে গেছে ! এখন, ওরা ব্যাগ পেয়ে গেলেই ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পরবে ! অসুবিধা হলো, ওদের ইন্টারন্যাশনাল কল ঠিক মতো না কাজ করায় ওরা উবের বুক করতে পারছে না ! আমি চট করে আমার মোবাইল থেকে বুক করে দিলাম ! ওদের শুধু Wifi কাজ করছিলো বলে হোয়াটস্যাপ-এ আমি গাড়ির সব ডিটেলস দিয়ে দিলাম ! প্রব্লেম টা একটু পরে বুঝলাম ! ওরা দাঁড়িয়ে আর্ৱিভাল-এ ! আর, ড্রাইভার দাঁড়িয়ে ডিপারচার-এ ! উনি, প্রায় দশ মিনিট ওদের জন্য অপেক্ষা করে বেরিয়ে গেলেন ! এবার, আমি ওদের কন্টাক্ট করার চেষ্টা করেও পারছি না ! কারণ, খুব সম্ভবত ওরা হয়তো তার সীমানার বাইরে বেরিয়ে গেছে ! এর ই মধ্যে অর্পিতা আরো কিছু দরকারি জিনিস আন্তে নিচের স্টোরে চলে গেছে ! আমি ভাবছি এইবারে গিয়ে দিদিদের এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসি, হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো ! গিয়ে খুলে দেখি ওরা এসে পৌছালো !
আমি বুঝতেই পেরে চট করে ডাইনিং টেবিল এ ওদের জন্য ফ্রেশ রান্না করা খাবার দিয়ে দিলাম ! খেয়ে তারপর ওরা ঘুরে-ঘুরে ঘরটা দেখতে লাগলো ! ইতিমধ্যেই, অর্পিতাও চলে এলো বাকি জিনিস কিনে ! এই দিনটায় আমরা দূরে কোথাও গেলাম না ! কাছাকাছি সব দরকারি জিনিস কোথায় পাওয়া যায়, সেগুলোই দেখতে থাকলাম – যদিও আমি জানি অর্পিতা আগে থেকে ডিটেল এ গুগল ম্যাপ এ সব দেখে রেখেছে !
আর, সেই ঘোরার সঙ্গে-সঙ্গে আমরা অফিসিয়ালি আমাদের ট্যুর কে স্টার্ট করে দিলাম !
তৃতীয় দিন :
ঘোরার প্রথম দিন ঠিক করা হলো – টাইমস স্কয়ারে আর স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখা ! সেদিন, সকাল থেকে ফ্রীজিঙ এলার্ট ছিল ! এই এলার্ট বা সতর্কতা তখন ই জারি করে, যখন প্রশাসন মনে করেন তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ অসুস্থ হয়ে পরতে পারেন ! আমি জানি তার মানে কি ! চাকরির সুবাদে খুব অল্প কিছুদিনের জন্য আমায় নিউ-ইয়র্ক এ কাটাতে হয়েছিল ! অর্পিতা এর কিন্তু কোনো আইডিয়া নেই ! ও খালি বলে চলেছে যাওয়ার জন্য ! অবশেষে, বাড়িতে করা ব্রেকফাস্ট খেয়ে সকাল দশটায় আমাদের হোটেল থেকে উবের করে রওয়ানা দিলাম ! গন্তব্যস্থল হলো বিগ বাস ট্যুর ! ওই বাস এ করে প্রথমেই আমরা স্ট্যাচু অফ লিবার্টি আইল্যান্ড ঘুরে নিয়ে, বাকি সময়ে আমরা টাইমস স্কয়ারে কাটাবো ! কারণ, ওখানে যত রাত বাড়ে, ততো টুরিস্ট বেশি হয় ! জায়গাটা দেখতে খুব মজার লাগে ! যদিও, ওখানে চুপ করে বসে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই !
কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম বিগ বাস এর স্ট্যান্ড এ! এইবার, সবাই টের পাচ্ছি ঠান্ডা কাকে বলে ! সব জ্যাকেট, জামা কাপড় ভেদ করে যেন ঠান্ডা শরীরের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে ! অর্পিতা এর অবস্থা খুব খারাপ ! আমরা সবাই সঝ্ঝো করতে পারলেও ওর রীতিমতো নিঃস্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে ! ভাগ্গিস, এর মধ্যে বাস এসে পড়ায় উঠে পরে নিচের ডেক এই বসলাম ! এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার – যে এই বিগ বাস এর প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রই হলো ডাবল ডেকের বাস এর ওপরের অংশটি সম্পূর্ণ খোলা ! যাতে পর্যটকরা খুব ভালো ভাবে শহর পরিদর্শন করতে পারেন ! কিন্তু, শীতকালে সেটাই সব থেকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ! কোনোরকমে অর্পিতা আর দিদিকে নিচে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি আর রাজীব দা ওপরে উঠতে বাধ্য হলাম জায়গা নেই বলে ! বাস গুলোতে দাঁড়ানো নিষেধ ! কিছুক্ষনের মধ্যে নিজেকে ডুবন্ত টাইটানিক এর পর্যটক এর সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য হলাম ! সব কিছু পরেও যদি মনে হয় ঠান্ডা টা সোজা শরীর এর ভেতর ঢুকে গিয়ে বুকের মধ্যে যেন আঁচড়ে দিচ্ছে ! সে এক অদ্ভুত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ! এর ই মাঝে লক্ষ্য করলাম আমাদের বাস টা ব্রুকলিন ব্রিজ এর ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে !

এইভাবে, প্রায় মিনিট পনোরো যাওয়ার পর আমাদের স্টপ এলো, যেখান থেকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখতে যাবো ! এখন যেন আমার মনে হচ্ছে – আমার হাথে, পায়ে কোথাও যেন কোনো সার নেই ! শুধু, একটাই বাঁচোয়া – এই এলার্ট আর আধ ঘন্টার মধ্যে উঠে যাবে ! তাই, ওই দিকটা ভালো করে দেখা যাবে !
তবে, নামার সাথে-সাথে ঠান্ডা যেন আরো জেঁকে বসলো ! কারণ, এটি অতলান্তিক মহাসাগর এর কাছে ! তার হাওয়া যেন ভেতর থেকে সবাইকে নাড়িয়ে দিচ্ছে ! এইবার, অর্পিতা বলে বসলো যে ও হোটেল এ ফিরে যাবে ! খুব ভাগ্য ভালো ওখানে একটা পাবলিক টয়লেট এ হিটার থাকায়, ওর তাতে অনেকটা ভালো বোধ করলো ! কারণ, ওই অবস্থায় ওকে একা ছাড়ার কোনো প্রশ্নই হয়না ! এরপর, আমাদের কে সিকিউরিটি চেক-ইন এর মধ্যে দিয়ে যেতে হলো ক্রুস এ চড়ার আগে, ঠিক যেমন এয়ারপোর্ট এ হয় ! সেই জায়গাটা কিন্তু ভীষণ গরম হিটার এর জন্য ! সেখানে ঢুকে তারপর যেন সবাই একটু স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললাম ! এরপর আর বিশেষ অসুবিধা হয়নি ! তার কারণ, ওই জাহাজটার ভেতরে গরম !

আর আমরা যখন ওখানে পৌছালাম, ততক্ষনে সতর্কতা উঠে গেছে ! কাজেই, তারপর আমাদের ঘোরাটা অনেক সহজ হয়ে গেছিলো !
এইবার, জাহাজ চলতে শুরু করলো ! একটু-একটু করে যেন গোটা নিউ ইয়র্ক শহরটা ছোট হতে লাগলো ! এখন, আমরা অতলান্তিক এর সংলগ্ন “বে”-ধরে এগিয়ে চলেছি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি এর দিকে ! খানিকটা দূর যেতেই মনে হলো – কেও যেন ক্যানভাস এ গোটা শহর এর উপকূল টা তুলে ধরেছে ! এখন, সূর্যের তেজে রোদ সেঁকতে-সেঁকতে সেটা উপভোগ করার আনন্দই যেন আলাদা ! মনে-মনে আওড়ালাম গোলাপি মুক্ত রহস্যের জটায়ু – রবি ঘোষের গলায় সেই ডায়ালগ – “এ কোথায় এলাম মশায় !” !

একটু যেতেই বাঁ-দিকে দেখতে পেলাম – সেই পৃথিবী এর অন্যতম সপ্তম আশ্চর্য – “স্ট্যাচু অফ লিবার্টি” !

মজার কথা হচ্ছে, এই অসামান্য কীর্তিটির পেছনে কিন্তু ফ্রান্স দেশটির অবদান রয়েছে, যেটা অনেকের ই হয়তো অজানা !
এরপরে, আইল্যান্ড এ নেমে আমাদের অনলাইন টিকেট কেটে মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম !

এই আইল্যান্ড টা খুব-ই ছোট ! গোটা আইল্যান্ডটা এক চক্কর মারতে হেঠে লাগে ঘন্টা দেড়েক ! তবে, এখান থেকে গোটা নিউ-ইয়র্ক ও নিউ জার্সি খুব ভালো ভাবে দেখা যায় ! সেই মুহূর্ত গুলো ভীষণ ই সুন্দর ! এর মধ্যে অবশ্য লাঞ্চ টা ওখানেই সেরে ফেললাম ! প্রচুর হাঠায়ে অনেক ক্যালোরি খরচ হয়েছে ! আরো বাকি আছে হাঠতে !
প্রায়, ঘন্টা দুয়েক থেকে আমরা পরের জাহাজ এ আবার নিউ ইয়র্ক এ ফিরলাম ! তখন, সবে সন্ধে পাঁচটা হয়েছে ! চারিদিক, অনেকটাই অন্ধকার হতে শুরু করেছে ! এবার, আমরা পরবর্তী বিগ বাস এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম ! এবারে, আমরা যাবো “টাইমস স্কয়ারে” ! কিছুক্ষনের, মধ্যে বাস আসতেই আমরা উঠে পড়লাম ! আবার, বাইরেটা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে ! যদিও, টাইমস স্কয়ারে অনেক লোক আর আলো থাকায় অপেক্ষাকৃত গরম ই থাকে ! মিনিট কুড়ি এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম এক অদ্ভুত স্বপ্নের জায়গায় ! যেখানে, বছরের সারা বছর ই কলকাতার দূর্গা-পুজোর মতো বাহারে লাইট জলে !

আমি তো যতবার ই গেছি, ততবার ই চুপ করে কফি হাথে নিয়ে বসে থেকে লোকজনদের দেখে গেছি ! এই জায়গাটা আমাদের কলকাতার বড়ো কোনো দূর্গা-পুজোর পাড়ার মতো ! সারা কলকাতা থেকে যেমন লোকেরা দেখতে আসে, আর সেই পাড়ার লোকেরা ইচ্ছে করলে বাড়ির ব্যালকনি তে বসে সেই জনজোয়ার দেখে ঠিক যেমন উপভোগ করেন, এখানেও অনেকটা সেরকম ! পার্থক্য হলো এখানে সবাই উপভোগ করেন ! এর ই ফাঁকে আমি খুঁজে-খুঁজে বেশ কিছু মুহূর্ত তুলে ধরলাম ! পাশেই, নিউ ইয়র্ক এর বিখ্যাত ব্রডওয়ে তে “লায়ন কিং” এর শো চলছে ! তাও বাইরে থেকে দেখলাম ! জানা থাকলে নিশ্চই কেটে দেখা হয়তো যেত !

আপাতত, সেটা পরের বারের জন্য তোলা থাকলো ! প্রায়, রাত এগারোটা অব্দি থেকে আমরা আরেকটা উবের ঠিক করে হোটেল এ ফিরলাম !
আমরা সবাই ক্লান্ত থাকবো বলে অর্পিতা আর দিদি দুজনে মিলে রাতের খাবার রেডি করে গেছিলো ! ফিরে, সবাই খাবার গরম করে খেয়ে নিয়ে আলো নিভিয়ে চুপটি করে ব্যালকনি থেকে রাতের হাডসন আর নিউ ইয়র্ক শহরটা উল্টো পার থেকে দেখতে থাকলাম ! আমি ক্লান্ত সত্ত্বেও আমার ক্যামেরাটা বার করে লেন্স এ চোখ লাগাতেই মনের খটকাটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো ! দূরে, টাইমস স্কয়ারে এর লাইট টা দেখছি আমাদের রুম থেকে দেখে যাচ্ছে ! অথচ, ওই জায়গাটা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় আধ ঘন্টা দূরে উল্টো পারে আছে !

কিছুক্ষনের মধ্যে আমি আর অর্পিতা, দিদি আর রাজীব দা কে বলে শুতে চলে এলাম পরের দিনের কথা মাথায় রেখে !
চথুর্ত দিন :
এই দিন, আমরা প্রধানত দুটো জায়গায় যাবো ! গ্রান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন ও সেন্ট প্যাট্রিক চার্চে ! আর, পথের মধ্যে হয়তো নিউ ইয়র্ক ফিনান্সিয়াল স্ট্রিট আর পাবলিক লাইব্রেরিটাও পরবে ! যদিও, লাইব্রেরি এর ভেতরে আমরা ঢুকবো না !
সকালে উঠে সবাই স্নান করে সকাল দশটার মধ্যে রেডি হয়ে গেলাম ! উবের বুক করে দিয়ে অপেক্ষা করলাম ! ঠিক করা হলো প্রথমে যাবো “গ্রান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন” !
কিছুক্ষনের, মধ্যেই উবের চলে এলো ! আমরা চারজনে গাড়িতে উঠতেই ছুট লাগলো ! এবারে, একটা টানেল এর মধ্যে দিয়ে আমাদের গাড়িটা খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিলো !

ক্যাব আমাদের কে গ্রান্ড সেন্ট্রাল এর ঠিক উল্টো দিকে নামিয়ে দিলো ! আমাদের কে ক্রসিংস থেকে রাস্তা পেরোতে হবে !

ঢোকার মুখে এই স্টেশন টির মাথার ওপর খুব সুন্দর একটা মূর্তি বসানো আছে, যার শিল্পগুণ কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমার অন্তত মনে হয় ! ওপরের ডানদিকের ছবিতে সেই মূর্তিকে দেখানো হয়েছে !
এর ঠিক নিচে গেট-এর এন্ট্রিটাও খুব সুন্দর ! বেশ কিছু পুরোনো দিনের চিমনির মতো ঝালর ওপর থেকে নিচে নেমেছে ( ওপরের বাঁ-দিকের কোনে ধরা হয়েছে ) ! আর তার শেষে একটা দরজা ! এই, দরজা খুলে স্টেশন এ প্রবেশ করতে হবে !
আর, এই দরজা ঠেলে খুলে যেই ভেতরে ঢুকলাম ! একটা লম্বা হলঘরের মধ্যে দিয়ে হেঠে চলেছি প্রধান এন্ট্রি-এর দিকে ! একটার পর একটা ঝাড়বাতি নেমে এসেছে ! কি সুন্দর ই না এই জায়গাটা ! দেখে তাজ্জব বনে গেছি !

এরপরে, প্রবেশ করলাম প্রধান হলঘরে ! যেখানে, একদিকে টিকেট কাউন্টার, অন্য দিকে বিভিন্ন ছোটোখাটো অথচ দামি জিনিসের দোকান ! ঘুরে-ঘুরে মোহিত হয়ে দেখে চলেছি ! তার, কয়েকটা মুহূর্ত নিচে দিলাম !

এরপরে, লক্ষ্য করলাম যে একটা বড়ো সিঁড়ি দিয়ে সবাই দোতলায় একটা লবিতে উঠে এই হলঘরের ছবি নিচ্ছে ! তার গুরুত্বটা আমরা ওপরে উঠে বুঝলাম ! আমাদের মুখে আর কোনো ভাষা ছিল না !

এরপরে, আমরা হাঠতে শুরু করলাম ! গন্তব্যস্থল হলো – “এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং” ! এই বাড়িটিকে বর্তমান যুগের অন্যতম স্থাপত্য শিল্পের নমুনা হিসাবে ধরা হয় ! আর, তার থেকেও বড়ো হচ্ছে – ছোটবেলা থেকে কত মুভিজ এই না একে দেখেছি ! “কিং-কোং” সিনেমাটার শেষ দৃশ্যটা মনে আজ ও আমার পরে ! যেখানে, নায়িকা কে বাঁচাতে গিয়ে জানোয়ারটি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এ উঠে লড়াই করতে থাকে ! যদিও, সে বুঝতে পারেনা যে সেনাবাহিনী তাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে – নায়িকা কে নয় ! এবং, শেষ দৃশ্যে ওই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে আহত হয়ে নিচে পরে !
মিনিট পনোরো হাঠার পর সেই বিশেষ জায়গায় পৌছালাম ! ওর, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করেও যেন তার শেষ দেখতে পারছি না !

ভেতরে, প্রবেশ করলাম ! কি সুন্দর ভেতরের লবিটা ! যদিও , সেই সময়ে ওদের কাজ চলার জন্য ওপরে উঠতে দিচ্ছিলো না ! তাও, এটাই বা কম কি !
বাঁ-দিকের ছবিতে এম্পায়ার স্টেট এর একটা মডেল রাখা আছে ! আর, নিচের ছবিটা হলো ওর প্রধান হলঘর !

|
 |
এরপর, যখন আবার হাঠা শুরু করলাম পাশের রোকেরফালর সেন্টার দেখবো বলে – তখন গোটা বিল্ডিংটাকে নিচ থেকে দেখতে পারলাম !

কিছুক্ষন হাঁঠতেই গিয়ে পড়লাম “রোকেরফেলার সেন্টার”-এ ! জায়গা টার স্নো-স্কি এর গ্রাউন্ড দেখেই – “হোম অ্যালোন” মুভি টার কথা মনে পরে গেলো ! এছাড়া, আরো বহু চলচ্ছিত্রে এই জায়গাটাকে খ্রীষ্টমাস এর সময়ে দেখানো হয়েছে ! সত্যি কথা বলতে কি – এই জায়গার একটা আলাদা চার্ম আছে !

ঐখানে ঘন্টা খানেক কাটিয়ে এবারে সবার প্রচন্ড খিদে লাগতে গুগল দেখে আমরা “সেন্ট্রাল কাফে”-তে খেতে ছুটলাম !

খাবার গুলো বেশ ভালো ! আর, খিদের পেটে পরার সঙ্গে-সঙ্গে জিনিস উধাও আর কি ! তারপর, আবার হাঠা শুরু করলাম !

আরেকটু যেতেই, হঠাৎ ই লক্ষ্য করলাম আরো এক পপুলার বিল্ডিং ! এর নাম হচ্ছে – “ক্রাইস্টালর বিল্ডিং” ! “এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং”-এর আগে উনি পৃথিবীর উচ্চতম বিল্ডিং এর তকমা ধরতেন !
আবার, হাঠতে শুরু করলাম ! কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎই চোখে পড়লো “ওয়াল স্ট্রিট”-এর সেই বিখ্যাত নামটা ! বলতে পারা যায়, সারা বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্র !

এরপর, ফিনান্সিয়াল স্ট্রিট বিশাল বড়ো দরজার সামনে রাশি-রাশি লোকের মধ্যে দিয়ে আরো এগিয়ে চললাম ! শেষ দুদিন-এ আমাদের হাঠা হয়তো ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতার যোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করবে !
কিছুক্ষনের মধ্যে দেখতে পেলাম সেন্ট প্যাট্রিক চার্চ-এর গেট ! এই শহরটা অনেকটাই আমার শহর কলকাতার মতো ! নতুন এর মাঝে পুরোনো – এই দুই এর যেন পাশাপাশি অস্তিত্ব তাল মিলিয়ে চলেছে !

বিল্ডিং-এর শেষে যখন রাস্তার মোড়ে গিয়ে পৌছালাম ! তখন, এর শিল্পের প্রশংসা না করে আর পারছি না ! বাইরে থেকেই যদি এতো সুন্দর হয়, তো ভেতরে ঢুকলে কত সুন্দর ই না দেখার সুযোগ হবে !
ভেতরে ঢুকে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম ! যেদিকেই তাকাই, সেদিকেই সুক্ষ কারিগরি দক্ষতা ফুটে উঠছে ! আর, তাই প্রাণ ভোরে নিয়ে চলেছে আমার চোখ আর বাকি ইন্দ্রিয়গুলো !

এ কথা বলতে আর বাধা নেই ! ভেতরে, এর প্রতিটা দেওয়াল এর নিখুঁত কাজ দেখে আমরা সবাই এক কথায় মুগ্ধ ! যেন, অজানা আকর্ষণে আমরা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে চলেছি ! কোথাও, এক মুহূর্ত বসার সুযোগ নেই ! সেই অসামান্য শিল্পের কয়েকটা উদাহরণ নিচের কোলাজ এ দিলাম !

জানালার কাঁচে এর ওপরেও যে কত সুন্দর কাজ করা আছে তা নিজের চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস ই হতো না !

প্রায়, ঘন্টা দেড়েক ওখানে ঘুরে নিজের চোখকে সার্থক করে বাইরে বেরোলাম ! হঠাৎ-ই, সবাই প্রচন্ড খিদে টের পেলাম ! আর, সঙ্গে-সঙ্গে এটাও বুঝলাম – সত্যিকারের শিল্পী যেমন সব কিছু ভুলে গিয়ে নিজের সৃষ্টি নিয়ে ব্যাস্ত থাকে, সাধারণ দর্শক ও সেরকম ভালো কিছু দেখতে পেলে ততটাই সাময়িক ভাবে আত্মভোলা হয়ে যেতে পারে !

একটু হাঁঠতেই সামনে দেখতে পেলাম – “সেল্টিক পাব” ! সটান ঢুকে গিয়ে বেশ একটা ভালো জায়গায় বসে পড়লাম ! কিছুক্ষনের মধ্যে ওয়েটার এসে সব অর্ডার নিয়ে গেলো ! এই পাব টার আম্বিয়ান্সটা বেশ আলাদা ! পুরোনো দিনের ক্লাসিক সব গান হচ্ছে ! যদিও, আমাদের তখন পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে ! গরম-গরম “ফিশ এন্ড চিপস”, “বার্গর” আর সঙ্গে ঠান্ডা পানিও খেয়ে যেন শরীরে, মনে নতুন করে বল এলো ! আরেকটু, বসে আমাদের শেষ ঠিকানার দিকে রওয়ানা দিলাম !

আমাদের, শেষ ঠিকানা হলো – “ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ওয়ান” ! যার, কাছে যাওয়ার সময় হঠাৎ-ই চোখে “নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি” পরে গেলো !

অবশেষে, এসে পৌছালাম সেই জায়গায় ! আমার মনে আছে কলেজ এ পড়তে থাকার সময় CNN-এ দেখে চমকে উঠেছিলাম ! বিশ্বাস-ই করতে পারছিলাম না নিজের চোখ কে ! আর, তার সঙ্গে জুড়ে আছে কত কষ্ট, দুঃখ ও খুব অজানা কিছু লোকের অস্বাভাবিক সাহসিকতার কাহিনী ! আজ, তার একটা বিল্ডিং-এ আছে এই স্মৃতি-ঝর্ণা ! এই ঝর্ণার চারপাশে মোটা পাচিলের গায়ে প্রতিটি হতভাগ্য মানুষের নাম লেখা আছে, যারা আর কোনোদিন পৃথিবীতে আলো দেখার সুযোগ পাননি ! সত্যি, বলতে কি – বহু লোক ভিড় করা সত্ত্বেও একটা অদ্ভুত নিস্তব্দতা ! আমি মনে-মনে এই প্রতিটি মানুষের আত্মার শান্তি কামনা করলাম !

এরপরে, আমরা দূরে একটা পাখির ডানার মতো বাড়িতে ঢুকলাম ! যেটা, দ্বিতীয় টাওয়ার এর কিছুটা অংশ নিয়ে করা হয়েছে !

এখানেও, যেন চারিদিকে কিছু একটা হারানো ও সব শেষে শান্তির ই কথা যেন প্রতিটা দেওয়ালে প্ৰতিফলিত হচ্ছে ! এখানে, আমরা আর নিচে নামলাম না ! দূর থেকে দেখেই বেরিয়ে এলাম !

এখান থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম এক বিশেষ জায়গায় ! যার কোনো বর্ণনাই হয়না ! এইখানে, সেদিন সেই মারাত্মক ঘটনার যত সাক্ষী আছে তা এরা সযত্নে রেখে দিয়েছেন তাদের সম্মানে, যারা আজ আর এই পৃথিবীতে নেই !

একটার পর একটা ছোট থেকে বড়ো সব কিছু যেন সেদিনের সেই দুঃখের আর ভয়ঙ্কর মুহূর্ত গুলো সামনে এনে দিচ্ছিলো ! ভাঙা দমকল থেকে কারোর লেখা তার শেষ চিঠি তার ছেলে-মেয়ের জন্য ! কারোর, বিয়ের আংটি বা কারোর পার্স এ রাখা তার পরিবারের ছবি ! সত্যি কথা বলতে কি – আমরা সবাই কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম ! যার ফ্যামিলির থেকে কেও চলে যায়, তার দুঃখ অন্য কেও বুঝবে না অন্য সমব্যাথী ছাড়া !

প্রায়, ঘন্টা খানেক আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম ! আর, নতুন “ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ওয়ান” কে দেখলাম ! যেন, এ জানান দিচ্ছে যে এই শহরবাসী, এই দেশ হেরে যায়নি ! এরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে !
এরপর, আমরা আবার হাঠতে শুরু করলাম ! হোটেল এ ফেরার পালা ! উবের বুক করে আধ ঘন্টার মধ্যে হোটেল এ পৌছালাম ! সেই দিন কিন্তু রাতে আর আমরা কেউ যেন ঠিক করে কথা বলতে পারছিলাম না ! ডিনার করে অন্ধকার ঘরে বসে ছিলাম !
আর, রাতের অন্ধকারে টেলি-লেন্স দিয়ে – “স্ট্যাচু অফ লিবার্টি” এর আরেক ভিন্ন সৌন্দর্য আছে !

রাত তখন বারোটা বাজে ! ওই দিকে দিদি আর অর্পিতা প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে ! পরের দিন দুপুর দুটোয় আমাদের সানfফ্রান্সিস্কো যাওয়ার ফ্লাইট !
তার ই মধ্যে হঠাৎ চোখে পড়লো ! রাতের অন্ধকারে আরেকবারের জন্য – “এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং” ঘর থেকে !

দেখে মনটা জুড়িয়ে গেলো ! সত্যি, এই হোটেল টা বিশেষ করে এই সুইট টা কোনোদিন ভুলবো না !
আমাদের নেক্সট এডভেঞ্চার শুরু হবে আমার বাড়ির কাছে – “সান ফ্রান্সিস্কো”-তে ! আশা করি সবার সেই ঘোরার অভিজ্ঞতাটাও ভালো লাগবে !
ততদিন , আপনারা সবাই সুস্থ থাকবেন আর ভালো থাকবেন ! |