এবারের পালা সান-ফ্রান্সিস্কো

সান-ফ্রান্সিস্কো ও তার চারপাশ: |
নিউ-ইয়র্ক কে শেষমেশ বিদায় জানিয়ে আমরা ঘরে ফেরার জন্য এয়ারপোর্ট এ পৌছালাম ! আমাদের গন্তব্যস্থল হলো – সান-ফ্রান্সিস্কো ! মজার কথা এই যে, নিউ-ইয়র্ক থেকে সান-ফ্রান্সিস্কো ফিরলে আমরা প্রায় তিন-ঘন্টা ফেরত পাবো, তার কারণ সান-ফ্রান্সিস্কো প্রায় তিন-ঘন্টা পিছিয়ে নিউ-ইয়র্ক এর থেকে ! এটার থেকেও বোঝা যায় যে এই দেশটার পূর্ব আর পশ্চিম এর মধ্যে কতটা দূরত্ব আছে ! আর, দেশটা কত্ত বড়ো !
এয়ারপোর্ট এ পৌঁছে কিছুক্ষনের মধ্যে সিকিউরিটি চেকইন করে নিয়ে আমরা প্রত্যেকে একটু খাবার খেলাম আর সঙ্গে গরম-গরম চা ! শরীরটা তাতে অনেকটা আরাম দিলো ! কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের ডাক পড়লো বোর্ডিং এর জন্য ! এইবার, উঠে পুরো বিশ্রাম ! কারণ, সবাই বেশ ক্লান্ত ছিলাম এই কদিন এর দৌড় ঝাপে ! এইবারে, আমি সটান এক ঘুম সেরে নিলাম ! মাঝে দুবার খাবার দেওয়ার সময়ে উঠে খেয়েছিলাম ! সান-ফ্রান্সিস্কো যখন প্লেনটা ঢুকছে, তখন সন্ধে সাড়ে পাঁচটা ! দিব্বি সূর্যের আলো ঝলমল করছে চারিদিক এ ! আর, আমাদের প্লেনটা মেঘ গুলোর মধ্যে দিয়ে ফুটবলারদের মতো ভাজিয়ে গোল্ডেন গেট ব্রিজ এর পাস্ দিয়ে গিয়ে এয়ারপোর্ট এ নামলো ! এই, দৃশ্যটা কিন্তু দেখতে দারুন লাগে ! এইবার, বেরিয়ে সটান উবের-এক্সেল এ আমার বাড়ি সান-রামোন এর ঠিকানা দিয়ে দিলাম ! কিছুক্ষনের মধ্যে একটা বড়ো গাড়ি চলে এলো ! কারণ, আমাদের সাথে অনেক মালপত্র আছে ! আমাদের, সান-রামোন এ ঢুকতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেলো ! এটা, পাহাড়ের কোলে একটা ছোট্ট শহর ! আমার ভীষণ-ই প্রিয় ! তার থেকেও যেটা ভালো লাগে, সেটা হলো – এর চারিদিকে তাকালে সবুজ আর রং-বেরং এর গাছ ! যা আমার মনটাকে ভীষণ আনন্দ দেয় ! আর, সব থেকে বড়ো হলো – বাড়ির কাছে থাকা এত্ত সুন্দর একটা পার্ক ! ফেরার সময়ে আমি দিদিদেরকে তার এক ঝলক দেখিয়ে দিলাম ! পরের দিনটা আমরা “রেস্ট-ডে” হিসাবেই রাখলাম ! অর্পিতা আর দিদি মিলে কিছু বাঙালি রান্না-বান্না করলো, সবাই মিলে মজা করে খেয়ে আর গল্প করে কাটালাম ! পরের দিনটা আমরা সান-রামোন এর চারপাশে ঘুরবো ! |
প্রথম দিন: |
পরের দিন আমরা সকালে উঠে ঠিক করলাম, সেদিনটা সান-রামোন এর চারপাশটায় ঘুরবো ! কারণ, তার পরের দিন আমাদের গোটা দিনটা কেটে যাবে সান-ফ্রান্সিস্কো ঘুরতে !
সকালে অবশ্য দিদি, অর্পিতা এর সাথে লোকাল ফার্মার্স মার্কেট থেকে সব টাটকা সবজি, মাছ কিনে আনল ! দুপুরে, খাওয়াদাওয়া করে যখন একটু হালকা ঠান্ডার মধ্যে ঝকঝকে রোদ উঠেছে – তখন আমরা বেরোলাম ! আমাদের ঠিকানা – “সান-রামোন সেন্ট্রাল পার্ক” ! কাছাকাছি, বহু মানুষ এখানে ঘুরতে আসে ! এছাড়া, অনেক গুলো বাস্কেট বল, টেনিস, ফুটবল ও একটা ক্রিকেট এর মাঠ-ও আছে ! তাই, ছুটির দিনে কচিকাঁচাদের সাথে বড়োদের ও ভিড় থাকে ! এমনকি, অনেক ফোক-ব্যান্ড এর পারফরমেন্স ও এখানে হয় ! সেই সঙ্গীত এর তালে-তালে অনেকেই তাদের পার্টনার-এর সাথে নাচে ! তবে, এই পার্কটার সব থেকে বড়ো আকর্ষণ হলো – এর ঢোকার মুখে যেন সারি-সারি গাছ হাত বাড়িয়ে সবাইকে অভ্যর্থনা করছে ! এছাড়া, খুব সুন্দর একটা টাউন-হল আছে ! যেখানে, দূর্গা পুজোর সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় ! একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম, আলো-আঁধারে একটা অদ্ভুত মুহূর্ত যেন সামনে ভেসে উঠেছে ! নর্থ-ক্যালিফর্নিয়া এর একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে এখানে “বে এরিয়া” বলা হয়, যা প্রধানত আপেল, গুগল, আমাজন, ফেসবুক ও আরো বহু কোম্পানি এর আতুরঘর ! আর, তার মধ্যে প্রথম তিনস্থানে থাকবে আমার এই শহর সৌন্দর্যের দিক দিয়ে ! শুধু, তাই নয় – এইখানে পরিবেশ এতটাই ভালো যে – কত বিভিন্ন রকমের পাখি আমি দেখেছি ও তাদেরকে ক্যামেরা বন্দি করেছি আমার টেলি-লেন্স এর সাহায্যে ! শুধু পাখিও নয়, দেখা যাবে নানারকম পশুও ! আর, সব থেকে আমার পছন্দের মধ্যে যে আছে – সে হলো কাঠবিড়ালি ! দেখতে ভীষণ-ই মিষ্টি ! কিন্তু, খবরদার ! ওর, ওই মিষ্টি ব্যাবহারে যেন ভুলে যেওনা ! খুব, দুস্টু – যদিনা সে কারোর পোষা হয় ! সব কিছু দেখে আমরা বাড়ি ফিরলাম ওই সন্ধে সাতটার মধ্যে ! সন্ধে বেলায় পাহাড়ের বুকে লাল সূর্যাস্ত কিন্তু কোনো অংশে কম যায়না ! সেদিন আমরা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম ডিনার করে ! পরের দিন, আমাদের ম্যারাথন ঘোরা রয়েছে ! |
দ্বিতীয় দিন : |
সকালে উঠে দেখলাম হালকা করে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো ! আকাশটা তখন সবে একটু-একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে !
এই প্রসঙ্গে বলা ভালো, যে “বে এরিয়া” তে আবহাওয়ার কোনো ভরসা নেই ! এই হয়তো ঝকঝকে রোদ পরে সবে গরম একটু পড়তে শুরু করেছে, হঠাৎ হয়তো দেখা গেলো ঝুপ করে খুব ঠান্ডা পরে গেলো ! যদিও, এখানে সারা বছর হালকা ঠান্ডার জন্য সারা বিশ্ব থেকে লোকজন এখানে থাকতে পছন্দ করে ! খুব সহজে বললে যেটা বলা যায় – বছরের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ আবহাওয়া অনেকটাই আমাদের শরৎ কালের মতো হয় ! এর মধ্যে আমরা সবাই স্নান করে ব্রেকফাস্ট করে গাড়ির জন্য বেরোচ্ছি ! বাড়ি থেকে আমরা প্রথমে যাবো ডাব্লিন স্টেশনে ! সেখান থেকে আমরা “বার্ট” ধরবো ! “বার্ট” হচ্ছে এখানকার মেট্রোরেল ! বেরোনোর ঠিক আগে দেখি আকাশ পুরো ঝকঝকে ! দেখেই যেন এনার্জি কয়েকশোগুন্ বেড়ে গেলো ! রাস্তা দিয়ে যেতে-যেতে আরো কয়েকটা চারপাশের জায়গা দেখে নেওয়া হলো ! আমাদের খুব ভাগ্য ভালো যে তখনো অত রাস্তায় গাড়ি নামেনি ! তাই, খুব চট করে আমরা ডাব্লিন স্টেশন-এ পৌঁছে গেলাম ! ট্রেন-এ যাওয়ার আরো একটা বড়ো কারণ হলো – এখানকার বিশ্ব-বিখ্যাত ট্রাফিক ! গাড়িতে যেখানে যেতে লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা, সেখানে ট্রেনে আমরা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে পৌঁছে যাবো ! আর, তাছাড়া ওখানেও আমরা ঠিক করেছি – “বিগ বাস” করেই ঘুরবো ! কাজেই, গাড়ি কোথায় পার্ক করতে হবে, সেইসব ঝামেলাও থাকেনা ! দশ মিনিট এর মধ্যে আমরা স্টেশন এ পৌঁছে গেলাম ! তবে, এখানে এই বার্ট এর লাইন হাইওয়ে এর মাঝখান দিয়ে অধিকাংশ জায়গায় চলেছে ! শুধুমাত্র ওকল্যান্ড-এর পর ট্রেনটা ঝুপ করে বেশ কয়েকশো মিটার পাতালে প্রবেশ করে গিয়ে বে-এর নিচ থেকে গিয়ে আবার ওপরে ওঠে সান-ফ্রান্সিস্কোতে ঢোকে ! শেষ পর্যন্ত, ঠিক সকাল দশটার মধ্যে আমরা সান-ফ্রান্সিস্কো তে পৌঁছে গেলাম ! ওখান থেকে উবের নিয়ে আমরা আরো পনেরো মিনিট এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমাদের বিগ বাস স্ট্যান্ড এ ! যদিও, শীতকাল পড়তে শুরু করেছে – তবু, সান-ফ্রান্সিস্কোতে বিগ বাস এর অভিজ্ঞতাটা অনেক ভালো হবে নিউ ইয়র্ক এর তুলনায়, সেটা আমরা জানি ! তাই, এখানে সবাই ওপরে উঠে বসে পড়লাম ! আমাদের হাথে আছে বিগ বাস এর রুট চার্ট ! আমরা সেই চার্ট দেখে ঠিক করবো কোথায় নামবো ! সেই মতো, আমরা ঠিক করে নিলাম যে প্রথম নামবো – “প্যালেস অফ ফাইন আর্টস” ! এই জায়গাটা শুধুমাত্র শিল্পের আতুর ঘর ই না, এর চারপাশের কারুকার্য যেকোনো মানুষের মন গলিয়ে দিতে পারে ! আমরা বসার কিছুক্ষনের মধ্যে বাস ভর্তি হয়ে গেলো ! এরপর, বাস এর চলা শুরু ! এখানে, আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে – বাস বা বাস এর মতো যেকোনো বড়ো যান-বাহন এর জন্য আলাদা “এইচ.ও.ভি”-রাস্তা থাকে ! সেখানে, ছোট গাড়ির প্রবেশ নিষেধ ! তাই, বাস-ও তাড়াতাড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে পারে ! পনেরো মিনিট এর মধ্যে, আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের প্রথম ডেস্টিনেশন-এ ! ঢোকার মুখে সবুজ মাঠ আর খুব বিশেষ এক ধরণের গাছ তার শোভা বাড়াচ্ছে ! আরেকটু, এগোতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো প্রাচীন গ্রিক বা রোমান স্টাইল এর বড়ো পিলার ! আর, তার মধ্যে দিয়ে রয়েছে প্রবেশ পথ ! এরপর, ভেতরে যত ঢুকেছি ততো আমার দিদি ও রাজীব দা অবাক হয়ে দেখে চলেছে ! আমি জানি যতবার ই আসিনা কেন, এই জায়গা আমায় কখনোই হতাশ করেনি ! এরপর, যখন আমি ওদেরকে নিয়ে আরো খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে উল্টো দিক করে দাঁড় করিয়ে দিলাম, সেটা দেখার পর ওরা মুগ্ধ হয়ে দেখে গেছিলো কোনো কথা না বলে ! কি অপূর্বই না এই জায়গাটা ! দেখলেও মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায় ! এর পরে, আমরা আরো এগোতে থাকলাম ! পাশে একটা ছোট্ট ঝিলে প্রচুর পাখিরা সাঁতার কাটছে, আবার জলের মাছ শিকার ও করছে ! প্রায়, দু-ঘন্টা ওখানে কাটিয়ে আমরা আবার পরের বাস এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম ! এইবার, আমরা দেখবো বিখ্যাত – “গোল্ডেন গেট ব্রিজ” ! কিছুক্ষনের মধ্যে বাস আসলেই আমরা উঠে পড়লাম ! আবার, গিয়ে দোতলায় বসলাম ! আমাদের বাস এইবার ছুটতে শুরু করলো ! মিনিট দশেক এর মধ্যে আমরা ব্রিজ এর ওপর দিয়ে ছুটে চলেছি ! আমরা, ঠিক করেছিলাম এই গেট দেখার জন্য দুটো বিশেষ জায়গা আছে ! সেখান থেকে নেমে দেখে তারপর পরের জায়গায় যাবো ! সেই কথা মতো – আমরা নেমে পড়লাম ! এখানে, বাকি সব পর্যটকদের মতো আমরাও একটা ছোট্ট সেলফি সেশন করে নিলাম ! যদিও, হাওয়ার চোটে দাঁড়ানো যাচ্ছে না ! এরপর, আবার পরের বাস এ উঠে পরে চলতে শুরু করলাম ! শহরের মধ্যে দিয়ে এঁকে-বেঁকে বাস চলে পরের জায়গাটায় নামলাম ! তবে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জায়গাতে আমরা নেমেছিলাম – যদিও, আমাদের সেখানে নামার প্ল্যান ছিল না ! সেটা হলো – “ফিফ্থ এভিনিউ” ! এটা অনেকটা কলকাতার নন্দন-এর মতো ! এখানে, বহু নতুন শিল্পী তাদের সেরা সৃষ্টি নিয়ে শো করে ! যেটা, আমার বেশ ভালো লেগেছে ! পরের গোল্ডেন গেট ব্রিজ এর ভিউ পয়েন্টে এসে পড়লাম ! এই জায়গাটা, আগের থেকে অনেকটা নিচে বে-এর বেশ কাছে ! এখানে, কিছুক্ষন থেকে আমরা লোকাল ফুড-স্টল থেকে কিছু বার্গর আর কফি খেয়ে আবার রওয়ানা দিলাম ! আমাদের পরের স্টেশন হলো – “জাপানীস গার্ডেন” ! কিছুক্ষন, চলার পর আমরা পৌঁছে গেলাম ! ঢোকার মুখে একটা বড়ো প্যাগোডার মতো দরজা ! টিকেট কেটে আমরা ঢুকে পড়লাম ! তখন ও গাছের পাতায় রং আছে ! তবে, অনেক গাছ এই পাতা ঝরতে শুরু করেছে ! তবুও, চারপাশের এই শান্ত পরিবেশকে উপভোগ করতেও বেশ ভালো লাগে ! আর, এই গার্ডেন এর মদ্ধমনি এই বিশেষ গাছটি ! যার, আকৃতি ও বিশেষত্ব যেন কেও না দেখে থাকতে পারেনা ! এর আবার উল্টো দিকে রয়েছে ওপেন থিয়েটার ! গার্ডেন থেকে বেরিয়ে খানিক্ষন ঘুরে আমরা আবার পরের গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম ! পরের জায়গাটি অন্য অনেক ছোটদের মতো আমার ও ভীষণ প্রিয় – “গিরাডলি সেন্টার” ! এর, নিচে কিছু কফি শপ ও বেকারি শপ আছে ! এই জায়গাটা, ভীষণ জনপ্রিয় চকলেট স্টল ! অবশ্য, ষ্টল বলাটা ভুল হবে ! বলা উচিত – শুধু চকলেট এর একটা বড়ো শপিং মল ! যেখানে, চারিদিকে শুধুই চকলেট-ই পাওয়া যায় ! শুধু তাই নয়, এখানে কিভাবে চকলেট তৈরী হচ্ছে, সেটাও দেখা যায় – যদিও সামনে কাঁচ দিয়ে ঘেরা ! অর্পিতা তো প্রায় পাঁচ থেকে ছ-রকমের চকলেট কিনে নিলো ! এই ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই ! এই পুরো জায়গাটায় চকলেট আর বেকারি এর সুন্দর গন্ধে যেন মঁ-মঁ করছে ! এরপরে, আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম ! পরের জায়গা – “স্টেট ক্যাপিটাল বিল্ডিং” ! আমেরিকাতে প্রায় প্রতিটা রাজ্যে একটা করে এই ধরণের বিল্ডিং আছে ! সেই জায়গায় যাওয়ার আগে আমরা আবার সান-ফ্রান্সিস্কো এর মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছি ! এই শহরটা যেহেতু প্রশান্ত মহাসাগরের কাছে ! তাই হঠাৎ করে মেঘ করে কুয়াশা হয়ে আবার কিছুক্ষনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গিয়ে শরৎ কালের আকাশ বেরিয়ে যায় ! সেইরকম কিছু মুহূর্ত আমার ক্যামেরাতে বন্দি হলো ! এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, এই পুরো শহরটা পাহাড়ের ওপর ! তাই, রাস্তা হয় খাড়া নেমে গেছে, নাহলে সোজা ওপরে উঠে গেছে ! সত্যি কথা বলতে কি রাস্তা এতটাই খাড়া, যে অনেক পাকা ড্রাইভার ও বেশ চাপেই থাকে এখানে চালাতে ! হঠাৎ-ই, একটা জিনিস চোখে পড়লো ! আমাদের বাসটা খাড়া রাস্তা ধরে নেমে আসছে ! আর, দূরে দেখতে পারছি – “আলকাট্রেজ” ! মনে পরে সেই বিখ্যাত লাইন টি “শন কোনারি” এর মুখে – “Welcome to the Rock” ! হাঁ ! ঠিক ই ধরেছেন ! এইখানেই, হলিউড এর সেই বিখ্যাত “রক” সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল ! আর, কিছুক্ষন যেতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো – “ক্যাপিটাল বিল্ডিং” ! যদিও আমাদের নামার কথা ছিল ! কিন্তু, হঠাৎ-ই ঠিক করা হলো – দূর থেকে দেখেই আমরা বাকি সময়টা “Pier 39” এ কাটাবো ! তাই, বাস চলতে থাকলে সান-ফ্রান্সিস্কো শহরের আরো কিছু বিশেষ গুনকে আমি ক্যামেরা বন্দি করলাম ! এখানকার ট্রাম, এখানকার লোকজন, স্ট্রিট পারফরমার ও আরো কতোকি ! ক্যাপিটাল বিল্ডিং দেখার আর মিনিট পনেরোর মধ্যে আমরা পিয়ার এর কাছে নেমে পড়লাম ! ঠিক করলাম ওখান থেকে হাঠতে-হাঠতে দেখতে থাকবো ! যেখানে নামলাম, তার পাশে একটা সুন্দর সবুজ মাঠে বাচ্ছারা সব খেলা-ধুলো করছে ! আরেকটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো রাশি-রাশি প্রাইভেট বোট ! এখানে, সাধারণত শনিবার আর রবিবার বহু লোক তাদের বোট নিয়ে মাঝ সমুদ্রে পারি দেয়, আবার কেও-কেও বে-এর চারপাশে ঘুরে বেড়ায় ! আরও কিছুটা হাঠার পর অবশেষে আমাদের শেষ ডেস্টিনেশন এ পৌছালাম ! এইখানে, যতবার ই আসিনা কেন, আমার মন জুড়িয়ে যায় ! কিছু করার দরকার নেই, চুপ করে হাথে একটা চা বা কফি নিয়ে লোকজনকে দেখতে থাকো ! কিংবা, সমুদ্রের ঢেউ, বা সিল মাছেদের কেরামতি, বাচ্ছাদের ফান রাইড, লাইভ শো ও আরো কতকি ! কখনো তো আবার কাগজের তৈরী রঙিন ঘুড়ি বা পাখা দেখেও আমার ছোটবেলার কথা মনে পরে যায় ! এছাড়া, পায়রা আর সি-গল্ জাতীয় পাখি তো আছেই তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার ! আমি অবশ্য আমার টেলি-লেন্স দিয়ে “আলকাট্রেজ” টা আরো একবার ভালো করে তোলার চেষ্টা করলাম ! ঠিক করা হলো সূর্যাস্ত দেখে তারপর আমরা কিছু খেয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেব ! এরপর, মাঝে-মাঝে টুকটাক মুখে দেয়ার মতো কিনে আনা – আর অপেক্ষা ! তবে, আমাদের সেই অপেক্ষা হতাশ করেনি ! এক অপূর্ব নীলাভ সূর্যাস্ত আমাদের চোখে পড়লো ! সত্যি ভাবা যায়না ! তার, কিছুক্ষনের মধ্যে আবার মেঘে ডেকে গেলো চারিদিক ! এর ই মধ্যে লক্ষ্য করলাম দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বড়ো জাহাজ ও সাবমেরিন কে ! আমার টেলি-লেন্স দিয়ে তুললাম ! এর, কিছুক্ষন পর চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো ! পিয়ার এর চারিদিক লাইট-এ ঝলমল করছে ! এ প্রসঙ্গে আরো কয়েকটা বিশেষ মুহূর্ত যা প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে সূর্যাস্ত কে তুলে ধরেছে, তার কয়েকটা এখানে দিলাম ! ফেরার সময়ে হয়ে এসেছে ! আমরা ফিরবো ক্যাব-এ ! তাই উবের বুক করে দিলাম ! মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে উবের এসে যেতেই আমি সামনে ক্যামেরা নিয়ে বসে পড়লাম ! আমাদের গাড়ি ওকল্যান্ড ব্রিজ এর ওপর দিয়ে চলতে শুরু করলো ! তবে, এই ব্রিজ এ ওঠার একটু পরেই আমরা পিছনে শহরটাকে দেখতে পেলাম ! সে আরো এক সুন্দর অভিজ্ঞতা ! রাতের নিউ ইয়র্ক আর রাতের সান-ফ্রান্সিস্কো, তুলনায় কেও কম যায়না ! এটুকুই বলতে পারি ! রাত সাড়ে দশটায় আমরা বাড়ি ফিরলাম ! পরের দিন বিশ্রাম ! তারপর আমরা আবার ছুটবো লস-এঞ্জেলেস এ ! আশা করি আমার এই অভিজ্ঞতাটিও আপনাদের ভালো লেগেছে ! এবং, পরের অভিজ্ঞতা আরো ভালো লাগবে ! ততদিন, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন ! |
Subscribe বোতাম এ ক্লিক করুন আপনার ইমেইল দিয়ে, ও আরো অনেক ছবির সাথে ঘুরতে যাওয়ার গল্প পড়ুন ! |