আলোর রোশনাই ভেগাস-এ:
অবশেষে, আমরা লস-এঞ্জেলেস এর পর্ব শেষ করে এগিয়ে চললাম আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল – লাস্যময়ী ভেগাস ও গ্রান্ড ক্যানিয়ন !
প্রথম দিন :
সকাল 10 টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে হোটেল থেকে চেক-আউট করে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্ট এর জন্য !  আমাদের পরের ফ্লাইট আছে ঠিক দু-ঘন্টা পরে !  এয়ারপোর্টে নেমে সিকিউরিটি চেক-ইন করতেই লেগে গেলো প্রায় ঘন্টা খানেক !  তারপর, আমরা লাউঞ্জে বসে একটু গরম চা নিয়ে অপেক্ষা করার কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের ফ্লাইট এর বোর্ডিং এর জন্য ডাকা শুরু হলো ! লস-এঞ্জেলেস থেকে ভেগাস হলো এক ঘন্টা পনোরো মিনিট এর ফ্লাইট !  তাই, খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভেগাস এ পৌঁছে যাবো !

প্লেনে উঠে বসতেই মিনিট দশেক এর মধ্যে ছেড়ে দিলো !

দুপুর, আড়াইটার মধ্যে আমরা ভেগাসে নেমে ব্যাগ গুলো নিয়ে ক্যাবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম ! অন্য সব জায়গার এয়ারপোর্ট এর থেকে ভেগাসের এয়ারপোর্ট টা খানিকটা আলাদা ! এখানে, শো-বিসনেস টা বড্ডো বেশি চলে ! তাই, অনেকেই দেখছি বিশাল বড়ো-বড়ো লিমুজিন ভাড়া করে হোটেলে যাচ্ছে !

এই জায়গাটা এরা শুধুমাত্র টাকা ওড়ানোর জন্য লোকে বাছে ! কাজেই, যতরকম উপায় আছে, প্রায় সব রকম পদ্ধতি এখানে টুরিস্টদের জন্য তুলে দেওয়া হয় ! যাতে তারা অনেকটাই সম্মোহিত হয়ে গিয়ে যেন আরো টাকা ভেগাসে দিয়ে আসে ! তাছাড়াও, আমেরিকানরা সব সময় এটা বলেন – “হোয়াটেভার ইউ ডু ইন ভেগাস – সুড স্টে ইন ভেগাস !” – অর্থাৎ, “আপনি যা ভেগাসে করবেন, সেখানেই তার স্মৃতি রেখে আসবেন !” অনেকেই, শুনেছি এই জায়গায় এসে আলোর রোশনাই, গ্ল্যামার আর গ্যাম্বলিং-এর চক্করে পাগল হয়ে গিয়ে সব হারিয়ে প্রায় সর্বশান্ত হয়ে ফিরেছেন ! তাই, ঘুরতে এলে সেই দিকটা মাথায় রেখে এগোনো উচিত !

তবে, এ প্রসঙ্গে এটাও বলে রাখা দরকার – টিভি তে একটা সাক্ষাৎকার এ চিত্র পরিচালক শ্রী সন্দীপ রায় বলেছিলেন যে তাঁর বাবা প্রয়াত শ্রী সত্যজিৎ রায় ও নাকি ক্যাসিনো তে গ্যাম্বলিং খেলতে বেশ ভালোবাসতেন ! তার, উদাহরণ কিন্তু “যতকান্ড কাঠমান্ডু” গল্পটিতে ফেলুদা, লালমোহনবাবু ও তোপসের খেলার কথা কিন্তু বলা আছে !

কাজেই, খানিকটা সেটা মাথায় রেখে আমিও ঠিক করলাম হোটেল ও তাদের ক্যাসিনোগুলোর চারপাশ ঘুরে দেখবো ! সেটাও তো একটা অভিজ্ঞতা !

অবশেষে, আমরা পৌছালাম হোটেল-এ ! আমাদের হোটেলটা হলো – “কসমোপলিটন” ! এই, হোটেল টা ভেনেশিয়া ও সিজার প্যালেস-এর পর অন্যতম সুন্দর ও আধুনিক পাঁচতারা হোটেল ! আর, তার থেকেও যেটা বড়ো হলো – আমরা দুটো সুইট বুক করেছিলাম ! আর, তার বিশেষ্যত্ব হলো – প্রতিটা সুইট-এ একটা করে দারুন বসার বারান্দা আছে, যেখান থেকে ভেগাসের প্রধান স্ট্রিপটা দেখা যায় ! এই, স্ট্রিপ এর ওপর সারি দিয়ে কিছুদূর অন্তর বিভিন্ন নামি-দামি হোটেল দাঁড়িয়ে আছে ! আর, তার দুদিকের ফুটপাথ দিয়ে অগুনিত টুরিস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাথে মোবাইল বা ক্যামেরা নিয়ে !

এই স্ট্রিপটা প্রায় মাইল পাঁচেক ! কাজেই, এই গোটা স্ট্রিপটা যদিও খালি চোখে দেখা যায়, কিন্তু, একটা হোটেল থেকে অন্য হোটেল এ পৌঁছাতে বা স্ট্রিপের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছাতে ঘন্টা দেড়েক ও লেগে যেতে পারে হাঁঠলে !

রুমের ভেতরে ঢুকে ভীষণ সুন্দর সাজানো বাথরুম এ গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে – যখন সুইটের বড়ো পাটিও দরজা খুললাম ! তখন, সন্ধে হয়ে এসেছে ! সূর্যাস্ত এর প্রতিচ্ছবি সামনে একটা বিশাল বড়ো হোটেল এর গায়ে দেখতে পেয়ে অসাধারণ লাগলো !

আর, তার কিছুক্ষনের মধ্যে চারিদিক যেন ঝলমলে আলোয় ভেসে গেলো ! যেদিকেই তাকাই, যেন দুর্গাপুজোর বাহারে আলোর কথাই যেন মনে পরে ! পার্থক্য একটাই, এখানে সারা বছর এইগুলো জলে !

এরপর, সবাই মিলে তৈরী হয়ে নিচে নামলাম ! আমরা, ছিলাম চুয়ান্ন তলায় আর দিদিরা ছিল বাহান্ন তলায় ! হোটেল এর নিচে ক্যাসিনো তে ঢুকে দেখলাম – সবাই ক্যাসিনোর বিশেষ কয়েন দিয়ে নানারঙের মেশিনে হাথল টেনে খেলছেন ! কেও আবার উন্নত কম্পিউটারের মতো মেশিনেও খেলছেন ! এখানে, সিগেরেট আর দামি মদের গন্ধে ভোঁ-ভোঁ করছে ! কত লোকে লক্ষ-লক্ষ টাকা একদিনে উড়িয়ে দিচ্ছেন ! আবার, অনেকে সেইরকম টাকা নিয়েও যাচ্ছেন ! যদিও, ওড়ানোর সংখ্যাটা অনেক বেশি নিয়ে যাওয়ার থেকে !

ওখানে, প্রায় ঘন্টা দেড়েক ঘুরে তারপর রাতের ভেগাস দেখতে বেরিয়ে গেলাম ! আগের থেকেই ঠিক করা আছে – পরের দিনটা পুরোটাই ভেগাস ঘুরে বেরিয়ে কাটাবো ! তাই দিনটা কাছাকাছি কয়েকটা হোটেল দূর থেকে দেখে নেবো !

মিনিট পনেরো হাঠার পরেই আমাদের চোখে পড়লো সেই বিখ্যাত বেলাজিও হোটেল এর ফাউন্টেন যাকে দেখে বহুদেশ অনুকরণ করে সেই স্থানের আকর্ষণ বাড়িয়েছে ! এই, প্রোগ্রামটা প্রায় মিনিট পনেরো চলে ! বহু-চর্চিত হলিউড গানের সঙ্গে তালে-তাল মিলিয়ে ফোয়ারা তার নিজের কসরত দেখায় ! অপূর্ব অভিজ্ঞতা ! বহু, হলিউড মুভিতে দেখানো হয়েছে এই ফোয়ারা কে !

প্রায় ঘন্টা তিনেক ওখানে ঘুরে প্রচন্ড খিদে পেয়ে যাওয়াতে – সবাই কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট এ ডিনার করে হোটেলে ফিরে সেদিনকার মতো দিনটা শেষ করলাম !

দ্বিতীয় দিন :
দ্বিতীয় দিন সকালে উঠে স্নান করে হোটেলে স্টারবাক্স কফিশপ এ গিয়ে ভালো করে ব্রেকফাস্ট সবাই করে আমাদের দিনটা শুরু করলাম ! দিনের বেলায় প্রথমেই লক্ষ্য করলাম বাঁ-দিকে দাড়িয়ে থাকা প্যারিস হোটেলটি ! এটার, আদল হুবুহু ফ্রান্স-এর আইফেল টাওয়ার এর মতো ! এবং, উচ্চতায় যথেষ্ট বড়ো ! এর, পিছনদিকে রয়েছে হোটেলের থাকবার ঘরগুলো ! 

আর, হোটেলটার ভেতরে ঢুকলে যেন মনে হবে এক টুকরো প্যারিস উঠে এসেছে ! হোটেল এর আর্কিটেকচার থেকে শুরু করে ভেতরের সংগীত, এমনকি বেয়াড়াদের পোশাক ও সেই সাক্ষী দেয় ! 

এরপর, সেই বিখ্যাত বেলাজিও হোটেল যার রাতের ফোয়ারা গতকাল আমরা সকলে দেখেছি !

দিনের বেলায় যেন আরো এক সৌন্দর্য বহন করে ! এরপর, প্রায় আধ ঘন্টা হাঠার পর চোখে পড়লো সেই বিখ্যাত – “সিজার প্যালেস” হোটেলটি ! মনে পরে – “হ্যাংওভার” সিনেমাটি? যেখানে, সেই মজার এডভেঞ্চার শুরু হয়েছিল ও পুরোটাই এই হোটেলটাকে ঘিরে !

এরপরে, যতই হেঠে চলেছি ততই ইউরোপিয়ান ধাঁচের সমস্ত হোটেলগুলোকে দেখে এক অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরী হচ্ছিলো !

কখনো গ্রীস, কখনো ফ্রান্স, কখনো ইতালি ! যেখানেই যাই না কেন, এক টুকরো ইউরোপ যেন এই মরুভূমিতে আমাদের মরীচিকার মতো প্রলোভন দেখিয়ে চলেছে !

এরপরে, ঢুকলাম আরো এক বিখ্যাত হোটেল ! এর নাম ভেনেশিয়া ! নাম শুনেই নিশ্চই বুঝতে পারছো যে এই হোটেলটা বিখ্যাত ভেনিস শহরের আদলেই তৈরী !

কেও নিজের চোখে না দেখলে যেন বিশ্বাস ই করবে না, হোটেল এর মধ্যে কৃত্তিম আকাশ ও জল দিয়ে খাল বানিয়ে একটা ছোট্ট শহর কে তুলে ধরা হয়েছে ! এবং, সেই খাল গুলো এতটাই বড়ো, সেখানে সেই এক ই ধাঁচের নৌকা ব্যবহার করে লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে ! এবং, এই পুরো খালটাই কিন্তু হোটেল এর মধ্যে কৃত্তিম আকাশের তলায় !

শুধু তাই নয়, হলঘরে বহু বিখ্যাত ইতালিয়ান শিল্পীদের আঁকা ছবির প্রতিকৃতি এখানে ব্যবহার করেছে ! মাঝে-মাঝে সত্যি ভুলে যাচ্ছিলাম যে সত্যি আমরা ইতালিতে নেই ! বসে আছি সুদূর আমেরিকাতে মরুভূমির মধ্যে !
আর, এদের সন্ধের দিকে পুরোনো ইউরোপিয়ান অলৌকিক নাটক ও দেখানো হয় ! এর জন্য কোনো আলাদা এন্ট্রি-ফি নেই !

 

ওখানে প্রায় ঘন্টা তিনেক থেকে আমরা আবার হোটেল এর দিকে ফিরতে শুরু করলাম ! গোটা শহরটাই কেও রাস্তা পার হতে পারবেন না ! পার হতে গেলে সব জায়গায় ভীষণ সুন্দর ওভার-ব্রিজ আছে ! তাতে, লিফট বা ইস্ক্যালাটোর বা সিঁড়ি আছে !

মানুষজন তাদের পছন্দের অপশনটা বেছে নিয়ে ব্রিজের ওপরে উঠে আসছেন !

এতোটা হাঠার পর আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি ! ঠিক করা হয় – হোটেল এ ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার ডিনার এ বেরোবো !

সেই মতো ডিনার করি কসমোপলিটন এর ভেতরে আরেকটা পাঁচতারা রেস্টুরেন্ট এ ! তার, চারপাশের সুন্দর ডেকোরেশন কে দেখে না তারিফ করে আর পারলাম না ! এক কথাই এই অভিজ্ঞতা অসামান্য !

তৃতীয় দিন :
তৃতীয় দিনটা আমাদের জন্য খুব রোমাঞ্চকর ! কারণ, আমরা এই দিন ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তৈরী হয়ে রওয়ানা দিলাম গ্রান্ড ক্যানিয়ন এর ট্যুরে !

আমরা আগে থেকেই স্পেশাল টুর বুক করে রেখেছিলাম ! প্ল্যান হচ্ছে ওই ট্যুর বাস এ ভেগাস থেকে রওয়ানা দিয়ে – প্রথমে হুভার বাঁধ দেখে, সেখান থেকে রুট 66 এ একটু বিশ্রাম নিয়ে – তারপর সোজা ক্যানিয়ন এর দিকে রওয়ানা দেওয়া ! আর, রুট 66 থেকে আমাদের জন্য লাঞ্চ এর সব কিছু নিয়ে বাস এই সেটা আমাদের গাইড দেবেন ! এখানে, মার্কিন লাঞ্চ – বার্গর, ফ্রেঞ্চ ফ্রেইজ আর সঙ্গে কোক !

হুভার বাঁধ দেখে পুরো তাজ্যব হয়ে গেলাম ! অবশ্য, এখানে বিশেষ কিছু জায়গা ছাড়া বাকি জায়গার ছবি তোলা নিষেধ !

ট্রান্সফরমার মুভি টার কথা মনে পরে যাচ্ছিলো, যেখানে ক্লাইম্যাক্স সিন টায় রোবট গুলো যুদ্ধ করছিলো ! এখানে, ঘন্টা খানেক থেকে গাইড এর থেকে নানারকম কাহিনী শুনে আবার বাস এ উঠলাম ! এরপরে আমরা আর একবার ই থামবো আমাদের লাঞ্চ নেওয়ার জন্য – রুট 66 !

এই জায়গাটার বিশেষত্ব হলো – এখানে এই গ্রামে একটা ছোট্ট জাদুঘর আছে এখানকার লোকেদের জীবিকা ও তাদের ব্যবহার করা সব কিছু এর ওপরে !

কিন্তু, এদের মার্কেটিং এর তারিফ না করে পারি না ! যেই জায়গায় কিছুই নেই ! সেখানেও, এরা এমন ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে – লোকজন এসে দেখে পুরোনো, নতুন সব ধরণের ঘর সাজানোর জিনিস কিনে নিয়ে যাচ্ছে !

এর কিছুক্ষন পরে আমরা ক্যানিয়ন এর দিকে এগিয়ে চললাম !  আমরা ক্যানিয়ন এর পশ্চিম প্রান্ত টা যাচ্ছি যেটা ভেগাস থেকে প্রায় পাঁচ ঘন্টার দূরে ! আমাদের উদ্দেশ্য, বিকেল এর মধ্যে ওখানে পৌঁছে সূর্যাস্ত দেখে আবার ফেরার পালা ! ঠিক দুপুর সাড়ে তিনটে তে আমরা পৌছালাম দীর্ঘ পথ চলে !

কিন্তু, গিয়ে সেই দৃশ্য দেখে আমাদের সব ক্লান্তি যেন নিমেষেই দূর হয়ে গেলো ! কি অপূর্ব রূপ ! শুনেছিলাম যে কোনো এক উল্কা পরে এই জায়গাটার সৃষ্টি হয়েছে !

শুরুর দিকে সোনালী আভায় রং ছড়াচ্ছিল ! যতই, সূর্য ডুবতে শুরু করলো – ততই সেই রং নীলাভ লাল হতে লাগলো !

মাঝে-মাঝে তো মনে হচ্ছিলো যেন মঙ্গোল গ্রহে চলে এসেছি ! এরপর, আমরা একটা জায়গায় নামলাম ! যেখানে, রেলিং দিয়ে বাধা আছে ! সেখান থেকে এই ক্যানিয়নটা যে কত গভীর তা দেখা যায় !

নিজেকে যেন তার কাছে পিঁপড়ের মতোই মনে হতে লাগলো ! সূর্যাস্ত দেখে আমরা এবারে হোটেলের দিকে রওয়ানা হলাম ! দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা কাটিয়ে আমরা যখন কসমোপলিটন এর কাছে পৌছালাম, তখন ও বেলাজিও এর ফোয়ারা অন্য গানের তালে শুরু হয়েছে !

সেটা দেখে আমরা হোটেল এ ফিরলাম ! ভেগাস এ ঢুকেই আমরা ডিনার টা একটা রেস্টুরেন্ট থেকে প্যাক করে নিয়েছিলাম ! যাতে রুমে ঢুকে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়তে পারি !

চতুর্থ দিন :
চতুর্থ দিন সকালে একটু দেরি করে উঠে ব্রেকফাস্ট করতে প্রথমে নিচে গেলাম ! স্টারবুকস থেকে খেয়ে আবার ওপরে চলে এলাম ! পরে, দুপুরে বেরিয়ে সিজার প্যালেসের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে লাঞ্চ করে আবার ঘুরতে শুরু করলাম ! এই দিনটাও আমাদের এখানেই কাটানোর কথা দিনে !

সিজার প্যালেস ছাড়িয়ে একটু এগোতেই একটা ভীষণ সুন্দর ঝর্ণা আমাদের প্রত্যেকের মন কাড়লো !

ঠিক যেন মনে হবে – প্রাচীন গ্রীস এর কোনো আখড়ায় চলে এসেছি !

আরো কিছুটা এগোতেই এবারে চোখে পড়লো একটি ষোড়শ শতকের একটি পর্তুগিজ যুদ্ধ জাহাজ !

কি অপূর্বই না তার কারুকার্য ! আরো কিছুটা এগোতে চোখে পড়লো মিরাজের সেই বিল্ডিং ! ঠিক যেন দুহাত দিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা করছে !

বিকেলের আরেকটা আকর্ষণ হলো “জায়ান্ট হোয়েলস” বা “বড়ো চাকা” !

বিকেল বেলায় এই চাকা গুলোতে ছোট ছোট “পড” থাকে যেখানে একসাথে দশজন উঠে তার চারপাশের কাঁচের দেওয়াল থেকে গোটা ভেগাসটা দেখতে পারে !

আর চাকাগুলি অত্যন্ত ধীরে ওপরে উঠে আবার নিচে নেমে আসে ! তাতে, ভেগাস এর ওপর থেকে সূর্যাস্ত এর অনুভুতিটা অন্যরকম হয় !

শুধু তাই নয়, এখানে অনেক এডভেঞ্চার স্পোর্টস ও হয় !

সব মিলিয়ে এই জায়গাটা ভীষণ সুন্দর ! সময়ের অভাবে আমাদেরকে পরের বার এইগুলো দেখতে হয়েছিল !  কিন্তু, তার অভিজ্ঞতাও কিন্তু অসাধারণ !

এইবারে, খুব খিদে পেয়ে যাওয়ায় হোটেল বালি-এর সামনে থাকা ফুডকোর্টে দাড়িয়ে কিছু খেয়ে নেওয়া হলো !

এরপরে, আমরা হাঠতে-হাঠতে এগিয়ে চললাম ইজিপ্ট এর আদলে তৈরী হোটেলটিকে দেখে !

হঠাৎ করে দেখেই চমকে গেলাম ! কি সুন্দর ভেতরে সাজানো আছে ! তার ভেতরে রুম গুলোর ভিউটাও কিন্তু অসাধারণ ! যা দেখলাম প্রায় প্রতিটা ভিআইপি রুম-এ ঝুলন্ত ব্যালকনি দেখে তাক লেগে যায় !

বেরিয়ে এসে আমরা এগিয়ে চললাম “ম্যান্ডেলা বে” হোটেলটার দিকে ! এর, জন্য আমাদের একটা ফুটব্রিজ দিয়ে হেঠে গিয়ে দূরে একটা জায়গায় উবের এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম !

পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্যাব চলে এলো ! তারপর, পনেরো মিনিট এর মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই হোটেল এ ! 

এই হোটেলটার বিশেষত্ব হলো – এদের খুব সুন্দর আর বড়ো একটা একুয়ারিয়াম আছে যার নিচে সবাই ঢুকে চারপাশের সুন্দর রঙিন মাছ, সার্ক সব কিছুই দেখতে পারবেন ! মনে হবে যেন ডুবুরির মতো জলের নিচে আপনি হেঠে চলেছেন ! আর, আপনার চারপাশে সুন্দর সুন্দর সব রঙিন জলের প্রাণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে !

এইবারে, আমাদের এই লম্বা ঘোরার পর্ব শেষ করা হবে আরো একটা অসাধারণ শো দেখে – “সার্কেল দু সোলেইল” ! এরা, বহুদিন ধরে নানাধরণের চোখ ধাঁধানো ট্রাপিজ এর সাথে কমেডি আর গান ও সুরের সাথে অভিনয় করে থাকে যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই হবে না !

সব থেকে কঠিন হলো তাদের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা ! কারণ, এখানে শুরুতেই বলা হয়েছিল যেন কোনো ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করা হয় ফোটোগ্রাফি তোলার ! কারণ, এদের পারফরমেন্স ভীষণ কঠিন ও রিস্কি !

একটু এদিক থেকে ওদিকে হয়ে গেলেই মারাত্মক বিপদ ! তাই, সবাই খুব ভালোভাবে মেনে চলছিল ! আমিও সেটা মেনে ওপরের ছবিটা তুলেছি যেটা আমার এই টুর এর অন্যতম পছন্দের ও প্রিয় ছবি !

শো দেখে হোটেল ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে এগারোটায় ফিরে তারপর ডিনার করে শুয়ে পড়লাম !

সত্যি কথা বলতে কি পরের দিন সবাই বড়োই ক্লান্ত ! এবারে, ফেরার পালা ! পরের দিন সকাল এগারোটায় চেক-আউট করে এয়ারপোর্ট এ পৌছালাম ! আমাদের ফ্লাইট হলো বিকেল চারটে তে !

এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেক-ইন করে আমরা ওখানেই লাঞ্চ করলাম ! তারপর, আরো ঘন্টা দুয়েক পরে আমাদের বোর্ডিং শুরু হলো !

সন্ধে বেলায় যখন আমাদের প্লেন টা ক্যালিফোর্নিয়াতে ঢুকছে – কি সুন্দর ই না লাগছে আকাশটা দেখে !

আশা করি – আপনাদের এই ঘোরার অভিজ্ঞতা টা ভালো লাগবে !

আর, প্রার্থনা করি সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন !

Subscribe বোতাম এ ক্লিক করুন আপনার ইমেইল দিয়ে, ও আরো অনেক ছবির সাথে ঘুরতে যাওয়ার গল্প পড়ুন !